ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ : যা বলছেন চীন, জাপানসহ বিশ্ব নেতারা

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ : যা বলছেন চীন, জাপানসহ বিশ্ব নেতারা

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ : যা বলছেন চীন, জাপানসহ বিশ্ব নেতারা

গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের অতর্কিত হামলায় শুরু হয়েছে চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ। শনিবার হঠাৎ বিপুলসংখ্যক রকেট হামলা চালানোর পর বেড়া ভেঙে ইসরাইলে ঢুকে পড়ে হামাস যোদ্ধারা।স্বাধীনতাপন্থী এ গোষ্ঠীটির আক্রমণে এখন পর্যন্ত সাত শতাধিক ইসরাইলি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৭৩ জন সেনা সদস্যও রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী।

অপরদিকে, গাজার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৯৩ জন এবং আহত হয়েছেন দুই হাজার ৭৫০ জন।চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব নেতারা নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন। চলুন দেখা যাক কোন দেশ এই যুদ্ধে কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

চীন
বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে সহিংসতার নাটকীয় পরিবর্তনে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে শান্ত থাকার ও সংযম প্রদর্শন করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসাথে যুদ্ধবিরতি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও অবস্থার অবনতি রোধ করার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

কাতার
কাতার গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইল পবিত্র মসজিদ আকসাতে সম্প্রতি সময় বারবার অনুপ্রবেশ করেছে। তারা ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। সেটার প্রতিক্রিয়াতেই এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তাই চলমান উত্তেজনার জন্য ইসরাইলই একমাত্র দায়ী।

বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ইসরাইল নির্লজ্জভাবে একের পর এক আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করেছে। তাই বৈধ আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত ও ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকারকে সম্মান করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তাদের বাধ্য করতে হবে। তারা যেন এই ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারের সমর্থনে কাতারের ধারাবাহিক অবস্থানকেও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত
হামাস-ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, ‘আমরা এই যুদ্ধে নিহত সবার প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, চলমান সঙ্কট আরব-ইসরাইল শান্তি চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তাই আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি ব্যাপক ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি অর্জনের সকল প্রক্রিয়া অবলম্বনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

কুয়েত
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলমান সঙ্ঘাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কুয়েত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘দখলদার দ্বারা উস্কানিমূলক সঙ্ঘাত বন্ধ’ ও ‘বসতি সম্প্রসারণের নীতি’ বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

ওমান
ওমান ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক সকল পক্ষকে ‘চলমান উত্তেজনা বন্ধে ও আন্তর্জাতিক আইন অবলম্বনে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানাই।’

মিশর
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির গুরুতর পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছে মিসর। এক বিবৃতিতে দেশটি বলেছে, আমরা উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানাই। একইসাথে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়-ক্ষতি এড়িয়ে যাওয়ার জন্যও সতর্ক করছি।

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি শুক্রবার সন্ধ্যায় ইসরাইল-ফিলিস্তিনের চলমান সঙ্কট নিয়ে আলোচনার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতির প্রধান জোসেপ বোরেলের সাথে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন যে গুরুতর ঝুঁকি এড়াতে উভয় পক্ষের সংযম অবলম্বন করা উচিত।

মরক্কো
মরক্কো গাজা উপত্যকায় পরিস্থিতির অবনতি ও সামরিক পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটি বিবৃতিতে বলেছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে হামলার নিন্দা জানায়।

হিজবুল্লাহ
লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে হামাসের এই বীরত্বপূর্ণ অভিযানের প্রশংসা করেছে। তারা বড় ধরনের এই অভিযানের জন্য হামাস ও তার সামরিক শাখা ইজেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডকে স্বাগত জানিয়েছে।

হিজবুল্লাহ বলেছে, আমরা দেশ-বিদেশের ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করছি।

দলটি আরো বলেছে, ইসরাইলে হামাসের এই বিশেষ অভিযান দখলদারদের ক্রমাগত অপরাধ ও পবিত্র স্থানগুলোতে অব্যাহত হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

গোষ্ঠীটি আরো যোগ করেছে, হামাসের এই অভিযান আরব, মুসলিম বিশ্ব ও সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি একটি বিশেষ বার্তা, বিশেষ করে যারা ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চাইছে, তাদের জন্য।

সিরিয়া
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামাসের এই বিশেষ অভিযানকে গৌরবজনক অর্জন বলে অভিহিত করেছে। দেশটি এক বিবৃতিতে বলেছে, এই অভিযান এই কথাই প্রমাণ করে যে ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো সবার্ত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সিরিয়া ফিলিস্তিনি জনগণ ও জায়নবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করছে।

দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের তীব্রতাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই অঞ্চলে দ্রুত একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়া প্রয়োজন, যাতে একটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এছাড়া ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি ন্যায্য ও ব্যাপক শান্তির জন্য জাতিসঙ্ঘে পূর্বে প্রস্তাবিত প্রস্তাবগুলোও বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।

ভেনিজুয়েলা
ভেনিজুয়েলার সরকার ইসরাইল-হামাসের চলমান যুদ্ধে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) এর এক বিবৃতিতে বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ মূলত বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক বৈধতায় তাদের ঐতিহাসিক অধিকার নিশ্চিত করতে না পারায় এই যুদ্ধে জড়িয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলের প্রতি সর্বদা তাদের অটুট সমর্থন বজায় থাকবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, আমরা কখনো তাদের ব্যর্থ হতে দেব না।

জাতিসঙ্ঘ
জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর দায়িত্ব পালনকারী ব্রাজিল ইসরাইলের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের এ সঙ্কট নিরসনে জাতিসঙ্ঘ রোববার নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করবে।

ইতালি
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এই হামলার পর ফোনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে কথা বলেছেন। ফোনকলে তিনি বলেন, এ যুদ্ধে রোম ইসরাইলের সাথে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে।

তিনি আরো বলেন, এই কঠিন সময় ইতালি ইসরাইলি জনগণের পাশে রয়েছে। তারা ইসরাইলের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে কাজ করবে।

জাপান
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োকো কামিকাওয়া বলেছেন, জাপান আন্তঃসীমান্ত হামলার তীব্র নিন্দা জানায়।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, টোকিও বেসামরিক নাগরিকসহ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বন্দি করে নেয়াকে ভালোভাবে নেয়নি।

তিনি আরো বলেন, ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর আক্রমণের ফলে গাজা উপত্যকায় বিপুল সংখ্যক হতাহতে আমরা গুরুতর উদ্বিগ্ন। আমরা আবারো সব পক্ষকে ক্ষয়-ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের জন্য আহ্বান জানিচ্ছি।

সূত্র : দ্য নিউজ