ইসরাইলের রাডার ফাঁকি দেয় হামাসের ক্ষুদ্রাকৃতির ড্রোন

ইসরাইলের রাডার ফাঁকি দেয় হামাসের ক্ষুদ্রাকৃতির ড্রোন

ছবিঃ সংগৃহীত।

ইসরাইলে শনিবার আচমকা হামলা চালিয়েছে হামাস। হামলায় ছোট ও তুলনামূলক সস্তা ড্রোন ব্যবহার করে ইসরাইলের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে সংগঠনের সদস্যরা। 

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর লাখ লাখ কোটি ডলার ব্যয়ে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র প্রযুক্তি ফাঁকি দিতেই এ ধরনের ড্রোনের ব্যবহার করা হয়েছে। 

ইসরাইলের জাতীয় দৈনিক হারেৎজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, হামলায় ইসরাইলের তৈরি ‘স্কাইলার্ক’ ড্রোনের মতো অতি ক্ষুদ্রাকৃতির আকাশযান ব্যবহার করেছে হামাস। সীমানা টপকেছেন প্যারাসুটে মোটর (প্যারাগ্লাইডার) লাগিয়ে। আর এ কারণেই ইসরাইলের রাডার তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি। 

ইসরাইলের তেল আবিবভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজের (আইএনএনএস) একজন জ্যেষ্ঠ গবেষক লিরান আনতেবি  বলেন,  ‘এসব ড্রোনের প্রযুক্তি এত সহজ যে একটি শিশুও তা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালাতে পারবে।’ 

ইউক্রেন যুদ্ধে যা দেখা গেছে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতেও একই দৃশ্য দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

হামাসের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজা সীমান্তে নজরদারির উদ্দেশ্যে স্থাপন করা ইসরাইলের একটি প্রতিরক্ষা টাওয়ারের ওপর ড্রোন থেকে বিস্ফোরক ফেলা হচ্ছে। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই প্রতিরক্ষা টাওয়ারটির বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গেই অকার্যকর হয়ে পড়ে ইসরাইলের নজরদারি ব্যবস্থা।  

হামাসের আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ড্রোন কাছাকাছি দূরত্ব থেকে ইসরাইলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে কিছু একটা ফেলছে। গাজা সীমান্তে ইসরাইলের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে একই কৌশলে হামলা করতে দেখা গেছে অন্যান্য ভিডিওতে। 
হামাসের ছোট ড্রোন ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সাফল্য একটি মেরকাভা  নামের ট্যাংক ধ্বংস করা। 

মেরকাভা হলো বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ট্যাংকগুলোর একটি। এই ট্যাংকে হামলার সময়ও স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় ছিল। আর তার প্রধান কারন হলো স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ট্যাংকবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকাতে প্রস্তুত। কিন্তু ড্রোনের মাধ্যমে যে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয় তার বিরুদ্ধে কাজ করে না। 

এর আগে ড্রোনের মাধ্যমে বিস্ফোরক ব্যবহারের এ কৌশল ব্যবহার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দুই বাহিনীই স্থানীয়ভাবে বিমানবাহিনীর বিকল্প হিসাবে এসব ড্রোন ব্যবহার করেছে। 

নজরদারির কাজেও এসব ড্রোনের ব্যবহার করা হয়। নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পাশাপাশি বিশেষভাবে তৈরি গ্রেনেড ও বিস্ফোরকও রাখা যায় এতে। এ ছাড়া ভারী অস্ত্রেও সজ্জিত করা যায় এসব ড্রোন।

লিরান আনতেবি  বলেন, ‘আকাশপথে হুমকির ক্ষেত্রে বিগত দশকে একটি বড় পরিবর্তন দেখেছি আমরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রথম এই প্রবণতা শুরু হয়েছে। এরপর ইউক্রেন হয়ে এখন গাজাতেও তা দেখা যাচ্ছে।’ 

২০০০ সাল থেকে জিপিএস প্রযুক্তিচালিত ড্রোন জনপ্রিয় হতে থাকে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে এ ধরনের ড্রোন জনপ্রিয়তা পেতে পারে তা আগেই ধারণা করা হয়েছিল।