ব্রাসেলস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ব্রাসেলস যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ফাইল ফটো

আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবর ইউরোপীয় কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে অংশ নিতে আগামী ২৪ অক্টোবর ৪ দিনের সফরে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

ঢাকা ও ইইউ’র একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চি করেছেন।

জানা গেছে, ব্রাসেলসে ২৭ রাষ্ট্রের জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন আয়োজিত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনীতে অংশ নেয়া ছাড়াও কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভনডার লিয়েনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ২৬ ও ২৭ অক্টোবর ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের ব্রাসেলসে উপস্থিত থাকার কথা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইইউভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

ব্রাসেলসের বাংলাদেশ মিশন জানিয়েছে, উল্লেখিত বৈঠকের বাইরেও ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টসহ ইইউ সদর দপ্তরের প্রভাব রয়েছে নীতিনির্ধারণী এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চেষ্টা চলছে। গত মাসে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নজিরবিহীন ভোটে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। যাকে ‘শক্ত ভাষার প্রস্তাব’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বৃটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি। ওই প্রস্তাবের মানেও খুঁজেছে তারা।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন সফরের পর ব্রাসেলসে এই সফর রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এক বছরের বেশি সময়জুড়ে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অব্যাহতভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাবেও ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

তাই গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশগ্রহণকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইইউভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হলে নির্বাচন নিয়ে নিজের অবস্থান তাঁদের কাছে সরাসরি তুলে ধরতে পারবেন।

যা থাকছে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে দুই দিনের গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে মূল অধিবেশনের ফাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি অধিবেশনে আলোচনা হবে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় অংশ নেবেন। মূলত ছয়টি প্রতিপাদ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে উত্তরণ, শিক্ষা ও গবেষণা, গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল, যোগাযোগের করিডর, স্বাস্থ্য পণ্য উৎপাদন এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন অভিযাত্রার আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় যোগাযোগের করিডর এবং ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে পারেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনে সহযোগিতায় জোর দিচ্ছে ইইউ। এরই অংশ হিসেবে ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি) থেকে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুতে বাংলাদেশকে কম সুদে সাড়ে তিন শ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের ফাঁকে এ বিষয়ে চুক্তি সই হতে পারে। এর পাশাপাশি সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য মঞ্জুরি সহায়তা দেওয়া হবে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রস্তাব পাশের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে ইইউ। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

সিইসির কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা হবে কি না, তা এই মুহূর্তে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। ঢাকা সফর করে যাওয়া ইইউর প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান (হাই রিপ্রেজেনটেটিভ) জোসেপ বোরেল বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

চিঠিতে ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে তারা সব ধরনের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করছে।