হামাসের ‘মিনি আর্মি’ যেভাবে গঠিত

হামাসের ‘মিনি আর্মি’ যেভাবে গঠিত

ছবিঃ সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক সামরিক সংগঠন হামাস। ক্ষুদ্র এ সংগঠনটি গত কয়েক দশকে ইসরাইলে সবচেয়ে বড় অভিযান চালিয়েছে। আকস্মিক এ অভিযান প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে শক্তিশালী ইসরাইলী বাহিনী। দূরদর্শী পরিকল্পনায় অভিযান চালানো ছোট দলটিকে নিয়ে গত ৭ অক্টোবর শুরু হয় জোর আলোচনা। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এ সংগঠনটির উত্থান হয়েছিল নব্বই দশকে। রয়টার্স, আলজাজিরা।

 

আজ থেকে ৩৫ বছর আগে গঠিত ছোট্ট সংগঠনটি বর্তমানে অনেক বেশি সুসংগঠিত। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরো গাজাজুড়ে। এর শক্তিশালী সামরিক শাখাও রয়েছে। হামাস সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় তারা (হামাস) একটি ছোটখাটো সেনাবাহিনীর সমান। এই সেনাবাহিনীর নিজস্ব সামরিক একাডেমি রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট থেকে শুরু করে নৌ ও কমান্ডো বাহিনী পর্যন্ত রয়েছে হামাসের। ১৯৯০ সালে হামাসের ১০ হাজার সৈন্য থাকলেও বর্তমানে সবমিলিয়ে হামাসের সৈন্যসংখ্যা ৪০ হাজার। রয়টার্স।

হামাস শুধু সেনাবাহিনী গঠন করেই থেমে থাকেনি। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে গাজা উপত্যকাজুড়ে হামাস বিস্তৃত টানেলের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এই টানেল নেটওয়ার্কে হামাস বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুত করেছে এবং বিভিন্ন অস্ত্র তৈরির কারখানাও এখানে গড়ে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, হামাসের কাছে বিপুল পরিমাণ বোমা, রকেট, মর্টার ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

 

নির্বাসিত হামাস নেতা আলি বারাকাহ বলেন, হামাস দীর্ঘদিন ধরেই ইরান এবং মিত্র হিজবুল্লাহর কাছ থেকে অর্থ, সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহায়তা নিচ্ছে। পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন দেশের ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। তিনি জানান, হামাস আগে ইরান এবং অন্যান্য দেশ থেকে অস্ত্র আমদানি করলেও এখন গাজায় নিজস্ব অবকাঠামোতেই বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদন করতে পারছে। উদাহরণ হিসেবে আলি বারাকাহ হামাসের রকেট সক্ষমতার উন্নয়নের কথা জানান। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের সময় হামাসের রকেটের পাল্লা ছিল মাত্র ৪০ কিলোমিটার। সেই পাল্লা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩০ কিলোমিটার বা তার বেশিতে।

হামাস’ শব্দের অর্থ ‘উত্থান’। সংগঠনটি নিয়ে ধারণা শুরু হয় ১৯৮৭ সাল থেকে। বিশেষ এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই গঠিত হয়েছিল সংগঠনটি। সেই বছর ১০ ডিসেম্বর ৪ ফিলিস্তিনি দিনমজুরকে ট্রাকচাপা দেয় ইসরাইল সেনাবাহিনী। ঘটনাস্থলে সবাই নিহত হন। মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এটিই ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক ‘প্রথম ইন্তিফাদা’ বা ‘স্বাধীনতা আন্দোলন’ নামে পরিচিত। আন্দোলনে অংশ নিতেই হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের বাড়িতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৪ ডিসেম্বর প্রথমবার সংগঠনটির বিষয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়। 

 

অবশেষে ১৯৮৮ সালে হামাসের সাংগঠানিক দলিল প্রকাশ করা হয়। আত্মপ্রকাশের পর ৩৫ বছরে ধীরে ধীরে সংগঠনটি তাদের সামরিক শাখার আরও বিস্তৃতি ঘটাতে থাকে। ২০০৭ সালে ফাতাহর সঙ্গে আইনসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে হামাস গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তবে অবরুদ্ধ গাজায় হামাসের বেড়ে উঠার পেছনে ব্যাপক সহায়তা করেছে ইরান। আর্থিক, সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রযুক্তি দিয়েও সহায়তা করছে দেশটি। এমনকি যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতেও সহয়তা করছে। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হামাস ইরানের কাছ থেকে সহায়তা হিসাবে ৭০ মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত স্বল্পপাল্লার রকেট নির্মাণ করে থাকি, কিন্তু আমাদের দূরপাল্লার সব রকেট আসে ইরান, সিরিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে।’ ইরানের পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহসহ অনেকেই হামাসকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে বলেও জানান তিনি।