অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞের

অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞের

অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞের

স্বাস্থ্যের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিবেদক তলালেং মোফোকেং মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বলেছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ক্রমাগত সহিংস বাস্তুচ্যুতি ও হামলার হুমকি একটি বড় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে।

এই অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধির পর থেকে কমপক্ষে ১২জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত এবং ২৪ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জেরে তিনি এসব কথা বলেন।মোফোকেং বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত সব পক্ষ এবং তাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবশ্যই দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্নভাবে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ প্রয়োজনীয় মানবিক পরিষেবাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘গাজার চিকিৎসা অবকাঠামোগুলোর অপূরণীয়ভাবে ক্ষতি হয়েছে এবং স্বাস্থ্য সেবাকারীরা চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবসহ একটি ভয়ানক পরিস্থিতিতে কাজ করছে।’এই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘মানবতাবাদী কর্মী, চিকিৎসক, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিকরা এই অঞ্চলে বোমাবর্ষণের মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে ১১১টিরও বেশি হামলার নথিভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ৪৮টি হামলা করা হয়েছে, এর ফলে কমপক্ষে ১২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

মোফোকেং বলেছেন, গাজায় খাদ্য, পানীয়, জ্বালানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকা ক্রমাগত বোমাবর্ষণ ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন হচ্ছে।’তিনি আরো বলেন, ‘দেশটির স্বাস্থ্যখাত সহনসীমার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’

মোফোকেং মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার দাবি করে সংঘাতের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং সকলের স্বাস্থ্যের অধিকার রক্ষা ও সম্মান করার জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য, পানীয়, আশ্রয়, জ্বালানি, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার জরুরি সরবরাহ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ইসরাইল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাম্প্রতিক আগ্রাসন বৃদ্ধিকে অবশ্যই উপক্ষো করা উচিত নয়। দখলদারিত্বের পর থেকে প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান স্থূল কাঠামোগত, পদ্ধতিগত ও দীর্ঘমেয়াদি সহিংসতার একটি নিষ্পেষণ মুহূর্তকে প্রতিনিধিত্ব করে এটি।’মোফোকেং বলেন,‘আমি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সদস্য দেশগুলোকে যুদ্ধের দামামা বাজানো বন্ধ করার আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণ ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ৫৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক দখলে রয়েছে। এই দখলদারিত্বের ফলে জবাবদিহিতার অভাব, চলমান স্থানচ্যুতি ও ধ্বংস, চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং পদ্ধতিগত জাতিগত বৈষম্য প্রভৃতি ঘটেছে।’

এই বিশেষজ্ঞ স্মরণ করেন, জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০০৯ থেকে ২০২৮ সালকে ‘শান্তির দশক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সব দেশের সার্বভৌম সমতা এবং তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বজায় রাখার জন্য তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

তিনি বলেন, ঘোষণাটি সংঘাত প্রতিরোধ করে এবং এর মূল কারণগুলোকে সমাধান করে শান্তি বজায় রাখার জন্য একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ করাকে সমর্থন করে।মোফোকেং বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের পদক্ষেপ তাদের মর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের সাথে জড়িত। আপনারা মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে নিভিয়ে দিতে পারবেন না।’

সূত্র : ইউএনবি