জাল ফেলা বন্ধ হলেও চাল পাননি জেলেরা

জাল ফেলা বন্ধ হলেও চাল পাননি জেলেরা

ছবিঃ সংগৃহীত।

একই চিত্র এবারও। নিষেধাজ্ঞায় নদীতে জাল ফেলা বন্ধ হলেও মিলছে না চাল। অথচ এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৬ দিন।

বাকি ১৬ দিনে যে মিলবে নেই তারও কোনো নিশ্চয়তা। জেলেরা বলছেন, প্রতিবছরই এমন ঘটনা ঘটে। ২৫ কেজি চাল পেতে মাস পেরিয়ে যায়। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ফুরোলেও ভাগ্যে জোটে না চাল। এদিকে গোটানো জাল মানেই শূন্য হাঁড়ি। কঠিন হয়ে পড়ে নুন-ভাতের জোগাড়। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বলছেন, পেতে দেরি হওয়ায় দিতেও দেরি হয়। যথাসময়ে পেলে জটিলতা হতো না। তবে মৎস্য বিভাগের লোকজন এ অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, যথাসময়েই চাল দেওয়া হয়।

 

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১২ অক্টোবর থেকে। চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে সরকারিভাবে ২৫ কেজি করে চাল পান দুস্থ জেলেরা। বিতরণের দায়িত্বে থাকেন ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। এবারও চাল পাননি দক্ষিণের ৮০ ভাগ জেলে। অধিকাংশ ইউপিতে চাল পৌঁছেনি। বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের মেম্বার ইব্রাহিম বিশ্বাস বলেন, আমার ৮নং ওয়ার্ডে এখনো চাল বিতরণ হয়নি। কেন চাল দেওয়া হচ্ছে না তা চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি ওই ইউপি চেয়ারম্যান নূরে আলম ব্যাপারী।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রহমতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান মিলন বলেন, আমার এখানে জেলে আছে দেড় হাজারের বেশি। ৩ দিন আগে বরাদ্দ পেয়েছি ৮৫০ জনের। চাল দেওয়া শুরু করলেই সবাই চলে আসেন। এ নিয়ে বিপদে আছি। এখন পর্যন্ত ১শ জেলেকে চাল দিয়েছি। বাকিদের কিভাবে সামলাব বুঝতে পারছি না।

 

পটুয়াখালীর গলাচিপার জেলে আবুল হোসেন বলেন, ৬ দিন হয়ে গেল চাল পাইনি। পরিবার নিয়ে কী করব ভেবে পাচ্ছি না। ভোলার লালমোহনের জেলে আনিস মাঝি বলেন, সহায়তার ওই ২৫ কেজি চাল ৫ জনের সংসারে ১০ দিনও চলে না। সেটা পেতেও দেরি হলে খাব কী? বরগুনার পাথরঘাটার জেলে আনোয়ার বলেন, উপজেলার কোথাও চাল দেওয়া হয়েছে নজির নেই। আলু-ভাতে খেলেও দৈনিক খরচ ৩শ টাকা। বেকার থাকার ২২ দিন এক বেলা খেয়েই থাকতে হচ্ছে। পিরোজপুরের চরখালীর জেলে মিলন মাঝি বলেন, গত বছরও চাল পেয়েছি নিষেধাজ্ঞার পর। বিপদের সময়ই যদি না পেলাম তো সেই চাল দিয়ে কী করব?

জেলেদের চাল না পাওয়ার অভিযোগের সত্যতা মেলে বরিশালের বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে। তাদের হিসাবেই ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চাল পেয়েছে মাত্র ২০ ভাগ জেলে। বরিশালের ৬ জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৮৪১। তাদের জন্য এবার বরাদ্দ ৭ হাজার ৬৯৬ টন চাল। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বিতরণ হওয়া চালের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৩ দশমিক শূন্য ৯৫ টন। মাথা পিছু ২৫ কেজি হিসাবে যা পেয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ জেলে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সাগর পাড়ের বরগুনার। এ জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩৬ হাজার ১৪ জন। বরাদ্দ চালের পরিমাণ ৯০০ দশমিক ৩৫ টন। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এক ছটাক চালও বিতরণ হয়নি এখানে। এরপরেই রয়েছে পিরোজপুর। ১৭ হাজার ৭০০ জেলের বিপরীতে চালের বরাদ্দ ৪৪২ দশমিক ৫০০ টন। বিতরণ হয়েছে ৩৪ টনের কিছু বেশি। এখনো চাল পাননি ৯২ ভাগের বেশি জেলে।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ করা একটি শ্রেণির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নিবন্ধিত সব জেলেই চলতি সপ্তাহের মধ্যেই চাল পেয়ে যাবেন। জেলা থেকে উপজেলা হয়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছানোসহ বিতরণে খানিকটা সময় লাগতেই পারে।

 

চাল বিতরণ প্রশ্নে আরও একটি সমস্যার কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। গলাচিপার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল মুন্সি বলেন, আমার ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। বরাদ্দ এসেছে ৩ হাজার ২৯০ জনের। যাদের নামে আসেনি তারা তো চাল না পাওয়ার কথা বলবেই। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, জেলার ৬ ইউনিয়নে জেলের সংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি। নিবন্ধন পেয়েছেন ৩৬ হাজার ১৪ জন। বাকি ২০ হাজার জেলে চাল না পেয়েও নিশ্চয় বলবেন না পেয়েছি।

বিষয়টি সম্পর্কে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, জেলেদের মধ্যে যারা একেবারেই দরিদ্র তাদের জন্যই মূলত এই বরাদ্দ। অনেক জেলে আছেন যারা মোটামুটি সচ্ছল। সরকারিভাবেই তাদের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা চলছে শুধু ইলিশ জেলেদের জন্য। অন্যান্য মাছ যারা ধরেন তাদের তো ধরায় নিষেধাজ্ঞা নেই। এভাবে সব জেলের জন্য বরাদ্দ দিতে গেলে সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। জনপ্রতিনিধিরা এদিকে খেয়াল রাখলেই কোনো জটিলতা থাকবে না।