স্মরণকালের বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

স্মরণকালের বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

ফাইল ছবি

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান রয়েছে বিএনপির আন্দোলন। দীর্ঘ দিন ধরেই বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে বিএনপি খুব একটা সফল এমনটা বলা যাবে না। তিন দফা সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ।

সরকারের এই শেষ সময় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর দুপুরে মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিরতিহীন কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি।

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে নেতাকর্মীরা আসার পথে বাধা আসতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন দলের নেতারা। তাই ২৫ তারিখের মধ্যেই সারা দেশের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আনার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।

এদিকে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি।

বিএনপি শীর্ষ নেতারা বলছেন, এবার বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত সমাবেশই মহাসমাবেশে রূপান্তরিত হবে। এর আগে ১৬ অক্টোবর যুব সমাবেশ সারা দেশের নেতা-কর্মীদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা হয়েছেন। এবারের মহাসমাবেশে তারই প্রতিফলন ঘটবে। সারাদেশ থেকে লাখ লাখ নেতাকর্মী সমাবেশে অংশ নেবেন।

বিএনপি শীর্ষ নেতারা আরও বলছেন, ২৮ অক্টোবর হবে বিএনপির নেতাকর্মীদের জাহির করার দিন। সরকারকে দেখিয়ে দেয়ার দিন, দাবি আদায়ের দিন। বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এবার জানান দেবে দেশে বিএনপি আছে এবং শক্ত অবস্থানেই আছে। সরকার জেলজুলুম নির্যাতন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের এতটুকু মনোবল ভাঙতে পারেনি। এদেশের জনগণ গণতন্ত্র চায়। জনগণই এবার দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।

দলীয় সূত্র জানায়, মহাসমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দলনেতা করে সারা দেশে সাংগঠনিক জেলাগুলোর সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিজ নিজ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে বিভাগীয় প্রস্তুতি সভা হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোর সভার প্রস্তুতি চলছে।

এবার দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো বেশ চাঙ্গা বলে জানিয়েছে সূত্রটি। যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও মহিলা দল ব্যাপক শোডাউন করবে। মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। টিম প্রধানদের সঙ্গে সমাবেশের অগ্রগতি নিয়ে দফায় দফায় কথা বলছেন সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। শীর্ষ নেতারাও এবার মহাসমাবেশ নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে ভার্চুয়ালি কথা বলছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও সরাসরি কথা বলছেন তিনি। এসব বৈঠকে মহাসমাবেশ সফল করার পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আগামী ২৮ তারিখ শনিবার আমরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকব না ইনশাআল্লাহ।

এদিকে শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুপুরে ডিএমপি কার্যালয়ে চিঠিটি পৌঁছে দিয়েছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।

অপরদিকে, মহাসমাবেশ সফল করতে রোববার (২২ অক্টোবর) যৌথসভা ডেকেছে বিএনপি। দুপুর ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সভায় সভাপতিত্ব করবেন।

এর আগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ১৮ অক্টোবর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচিকে আংশিক কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‌মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে।