বাঁশখালীতে অবরোধে মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত, বাঁশ-লাঠি হাতে সতর্ক আওয়ামী লীগ

বাঁশখালীতে অবরোধে মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত, বাঁশ-লাঠি হাতে সতর্ক আওয়ামী লীগ

ছবিঃ সংগৃহীত।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা। বিগত সময়ের রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই উপজেলার নাম। হরতাল-অবরোধ বলতেই বাঁশখালীতে বিএনপি-জামায়াতের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ নিয়মিত রুটিন ছিল। তবে দীর্ঘ সময় পর বিএনপি জামায়াতের ডাকা ৭২ ঘন্টার রেলপথ, নৌপথ, ও রাজপথ অবরোধের প্রথম দিনে বাঁশখালীর কোথাও মাঠে দেখা যায়নি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের। তবে সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সর্তক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সকাল থেকে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দও। এদিন ভোর থেকে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বাঁশ-লাঠি হাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাঁশখালীতে সরেজমিনে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া এ অবরোধ কর্মসূচীতে বাঁশখালী উপজেলার সড়কগুলোতে প্রতিদিনের মতো সবধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। তবে যানবাহন অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম ছিল। এছাড়া অবরোধের মধ্যেই কর্মজীবী মানুষদের কাজে বের হতে দেখা গেছে। সকাল থেকে প্রতিদিনের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত, দোকানপাট যথারীতি খুলেছে। সন্ধা ৬ টা পর্যন্ত বাঁশখালীর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে সড়কে দেখা যায়নি বিএনপি জামায়াতের কোনো পিকেটার। হয়নি কোথাও মিছিল সমাবেশ।

অপরদিকে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও দেশব্যাপী নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বাঁশখালীর বেশ কিছু স্থানে শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। এদিন সকাল থেকেই বাঁশ-লাঠি হাতে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

 

এদিকে দুপুর ১টার দিকে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করেছে উপজেলা আ. লীগ। ঐ শান্তি সমাবেশ ও মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর, পৌর মেয়র এ্যাড. তোফাইল বিন হোসাইন, বৈলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কফিল উদ্দীন।

অপরদিকে সকাল থেকে উপজেলার সদর এলাকায় কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল এবং দিনভর অবস্থান কর্মসুচী পালন করেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ. লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ কবির লিটনের অনুসারীরা। এতে তাদের হাতে লাঠি দেখা যায়। তাদের এ মিছিলে অংশনেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মিছিলে নেতৃত্বদেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদ হোসাইন, পৌরসভা শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুল জাব্বার।

উপজেলা যুবলীগ নেতা দিপেস চক্রবর্তী কালু বলেন, ‘গত ২৮ তারিখ বিএনপি-জামায়াত তাণ্ডব চালিয়ে আবার প্রমাণ করল, ২০১৩-১৪ সালে তারা যা করেছে, তা আবার শুরু করেছে। গাড়ি পোড়ানো, পুলিশ হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, সাংবাদিক ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বিনা কারণে, বিনা উসকানিতে। তাদের কাজই হলো কীভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ করা যায়, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়। তাই তাঁদের মানুষ পোড়ানোর অবরোধ রুখে দিতে বৈলছড়ির স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভোর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছে। কেউ যদি কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে তাৎক্ষণিক তাদের কঠোরভাবে দমন করব।'

অপরদিকে উপজেলার পুকুরিয়ার চানপুরে যুবলীগ নেতা ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে বাঁশ-লাঠি হাতে দিনভর সর্তক অবস্থান, কালীপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আ.ন.ম শাহাদত আলমের নেতৃত্বে শত শত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের বাঁশ-লাঠি হাতে দিনভর সতর্ক অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিল। বৈলছড়িতে উপজেলা যুবলীগ নেতা দিপেস চক্রবর্তী কালুর নেতৃত্বে বাঁশ-লাঠি হাতে অবস্থান, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম উদ্দীন মাহফুজের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল, বাঁশ-লাঠি হাতে সতর্ক অবস্থান। এবং চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী একাই পূর্ব ঘোষণা দিয়ে চাম্বল বাজার এলাকায় বাঁশ-লাঠি হাতে সতর্ক অবস্থান কর্মসুচী পালন করেন।

অন্যদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো উপজেলা জুড়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভোর থেকে উপজেলার নানা পয়েন্টে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া প্রধান সড়কে কিছুক্ষণ পর পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মহড়া দিয়েছে। হরতালে শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।

 

এ ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক বিএনপি নেতা জানান, ‘দলের মহাসমাবেশ উপলক্ষে স্থানীয় নেতারা সবাই ঢাকা গিয়েছে। ওখানেই সবাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তাঁরা এখনো এলাকায় পৌছাতে পারেনাই। তবে কিছু নেতাকর্মী এলাকায় থাকলেও পুলিশের হার্ডলাইন উপস্থিতি, আওয়ামী লীগের অবস্থান, ও মামলা-হামলা এবং গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন।

উপজেলা যুবলীগ নেতা দিপেস চক্রবর্তী কালু বলেন, ‘গত ২৮ তারিখ বিএনপি-জামায়াত তাণ্ডব চালিয়ে আবার প্রমাণ করল, ২০১৩-১৪ সালে তারা যা করেছে, তা আবার শুরু করেছে। গাড়ি পোড়ানো, পুলিশ হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা, সাংবাদিক ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে বিনা কারণে, বিনা উসকানিতে। তাদের কাজই হলো কীভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ করা যায়, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায়। তাই তাঁদের মানুষ পোড়ানোর অবরোধ রুখে দিতে বৈলছড়ির স্থানীয় নেতাকর্মীরা ভোর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছে। কেউ যদি কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে তাৎক্ষণিক তাদের কঠোরভাবে দমন করব।'

উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি নাঈম উদ্দীন মাহফুজ বলেন, ‘আমরা ভোর থেকে বাঁশখালী সদর ও বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছি। বিএনপি-জামায়াতের কোনো অস্তিত্ব নেই এখানে। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আমরা সব সময় সতর্ক। শুনেছি বিএনপি-জামায়াত রাজপথে নামবে, তবে তাদের কোনো দেখা নেই। এতে বুঝা যায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বাঁশখালীতে বিএনপি-জামায়াতের কোন অস্তিত্ব নেই।'

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল গফুর বলেন, ‘বিএনপি জামায়াত অবরোধ দিয়েছে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য। তাদের মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা নেশা ও পেশা হয়ে গেছে। আর এদিকে সকাল থেকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি সমাবেশ করেছি অবরোধের নামে তাঁদের বিশৃঙ্খলা রুখে দেওয়ার জন্য। যতবারই তাঁরা হরতাল-অবরোধ দিবে ততবারই জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা তাদের সেই হরতাল অবরোধ প্রতিহত করব। যাতে জনগণের জানমাল ও দেশের সম্পদ রক্ষা করা যায়।'

এ ব্যাপারে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দীন পিপিএম বলেন, ‘সকাল থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণস্থানে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। এখনো পর্যন্ত কোন অপ্রতিকার ঘটনা, পিকেটিং বা মিছিল হয়নি। অন্যান্য দিনের মতো সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। অবরোধে জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার কোন প্রভাব পড়তে দেয়নি পুলিশ। তারপরও কেউ যদি কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।'