কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন আজ

কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন আজ

সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার কক্সবাজার যাচ্ছেন। সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি নির্মিত দেশের প্রথম এবং এশিয়ার বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার-দোহাজারী নতুন রেলপথ চালু হবে।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আজ দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলসহ প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকার ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মাতারবাড়ীতে অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে উঠছে মহেশখালী।

প্রধানমন্ত্রী আজ ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত রেললাইন পরিদর্শন করবেন। একই সঙ্গে তিনি কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে সুধী সমাবেশ ও মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জনসভায় ভাষণ দেবেন। জনসভাটি জনসমুদ্রে রূপ দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী, তিনি আজ সকাল পৌনে ১০টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। বেলা পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম জেলার দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নবনির্মিত ১০২ কিলোমিটার রেললাইনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে দিয়েই ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হয়ে পর্যটননগরী কক্সবাজারের নতুন রেল যোগাযোগ স্থাপন হতে যাচ্ছে। বেলা ১২টায় কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন থেকে রামু রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রেলপথে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১২টা ২০ মিনিটে রামু রেলওয়ে স্টেশন থেকে সড়কপথে রামু সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। দুপুর সোয়া ২টায় রামু সেনানিবাস থেকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। দুপুর আড়াইটায় ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল’—এর উদ্বোধন করবেন। জাইকার সহযোগিতায় গড়ে উঠবে এই গভীর সমুদ্রবন্দর। অবশ্য এখনো বন্দর হিসাবে গড়ে না উঠলেও গত সাত মাসে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে ভিড়েছে বিশাল আকৃতির ১০টি জাহাজ। এখানে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টনের জাহাজ আসতে পারবে। এটা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং গভীর সমুদ্রবন্দর। এটা বাস্তবায়িত হলে সরাসরি মালামাল এখানে আসবে এবং ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যাবে। বিকাল সোয়া ৩টায় মহেলখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল ৫টায় মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুত্ প্রকল্পের টাউনশিপ মাঠে নির্মিত হেলিপ্যাড থেকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন তিনি। বিকাল সোয়া ৫টায় বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে প্রধামন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রকল্প এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন সাজসাজ রব। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে একাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। রং-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে ছেয়ে গেছে মহাসড়কসহ প্রধান প্রধান সড়ক। বিশেষ করে, মহেশখালী বাজার থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত সড়কে তোরণ ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী আজ ১৫ প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উদ্বোধন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো হলো—মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন, মাতারবাড়ীর আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র, বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত সেতু, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে কুতুবদিয়া দ্বীপকে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্তকরণ, উখিয়ার বর্জ্য থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদন প্রকল্প। এছাড়া রামু উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, চকরিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল হামিদ পৌর বাস টার্মিনালের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নকাজ, কুতুবদিয়া ঠান্ডা চৌকিদার পাড়া আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মহেশখালীর গোরকঘাটা-শাপলাপুরের জনতাবাজার সড়ক, বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমি ভরাট, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প, ঈদগাঁও জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহেশখালীর ইউনুছখালীর উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়ার রত্না ও মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন। অন্যদিকে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে যেসব প্রকল্পের তা হলো—মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলের ১ম টার্মিনাল, টেকনাফের মালটিপারপাস ডিজাস্টার রেসিডেন্ট শেলটার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর জোয়ারিয়ানালার নন্দাখালী সড়কে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ প্রকল্প।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম এবং এশিয়ার বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশন। ঝিনুকের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এর অবকাঠামো। এখানে রয়েছে তারকা মানের হোটেল, শপিংমল, কনভেনশন সেন্টার, রেস্টুরেন্ট, শিশু যত্নকেন্দ্র, লাগেজ রাখার লকারসহ অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। এরই মধ্যে রেল স্টেশনটি বিদেশিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আক্ষরিক অর্থে ঝিনুক না হলেও সমুদ্র দেখতে এসে ট্রেন থেকে নেমে প্রথম দর্শনেই সামুদ্রিক আবহ পাওয়া যাবে গোটা স্টেশনে। কেবল আসা-যাওয়ার জন্যই হয়নি এ স্টেশন, দেওয়া হয়েছে এর বহুমাত্রিক রূপও। নান্দনিক ডিজাইন আর নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি এর বহুমাত্রিক পরিধি নিয়ে গড়ে উঠা এ স্টেশন পরিণত হয়েছে দর্শনার্থীদের বিনোদনের নতুন গন্তব্য।

কল্পনাকে হার মানিয়ে একেবারে সাগর ঘেঁষেই তৈরি হয়ে গেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র। সাগর থেকে মাটি এনেই তৈরি করা হয়েছে এই নতুন ভূমি। আর এই ভূমিতে গড়ে ওঠা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে গত মাসেই। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুরো সক্ষমতার বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। জাপানের সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।