আইসিসির নিষেধাজ্ঞার পর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী?

আইসিসির নিষেধাজ্ঞার পর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী?

আইসিসির নিষেধাজ্ঞার পর শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী?

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট- এসএলসিকে বরখাস্ত করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল- আইসিসি। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের ফলেই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে।এর আগে চলমান ক্রিকেট বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড বাতিল ঘোষণা করে। যদিও পরে সেই সিদ্ধান্ত দেশটির আদালত থেকে রহিত করা হয়।

কিন্তু বোর্ড বাতিলের নির্দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পর্যদ আইসিসির ‘নীতিমালার গুরুতর অবমাননা’ হিসেবে দেখছে। তারা এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে।আইসিসির নীতিমালা অনুযায়ী যে কোনও দেশের ক্রিকেট বোর্ড হবে স্বায়ত্বশাসিত এবং সরকারের কেনা ধরনের প্রভাব থাকবে না বোর্ড প্রশাসনের ওপর।

শ্রীলঙ্কা এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার নয় নম্বর দল, নয় ম্যাচ খেলে মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে দলটি।এই দলের কোচের দায়িত্বে ছিলন সাবেক ইংল্যান্ড কোচ ক্রিস সিলভারউড।গত সপ্তাহে ক্রীড়ামন্ত্রী রোশন রানাসিংহে সংসদে এক বিবৃতিতে এসএলসিকে "বিশ্বাসঘাতক এবং দুর্নীতিবাজ" বলে বর্ণনা করেছেন এবং বোর্ড সদস্যদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এরপর লঙ্কান ক্রিকেটের প্রধান মোহন ডি সিলভা পদত্যাগ করেন এবং বোর্ড বরখাস্ত করা হয়।ক্রীড়ামন্ত্রী রানাসিংহে তাদের জায়গায় বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গার সভাপতিত্বে একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করেন।যদিও লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের এই বিলুপ্তির বিরুদ্ধে আদালত একটি আবেদন দুই সপ্তাহের স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করেছে।

শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট তাদের ওপর আনা আর্থিক অনিয়ম সম্পর্কে রানাসিংহের অভিযোগের বিষয়ে একটি বিবৃতিও জারি করেছে।বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ার পরই ভারতের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়েছে। এর মাত্র একদিন পর আইসিসির স্থগিতাদেশ আসে।

আগামী ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কোনও পূর্ব পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ নেই এবং আইসিসির হিসেব অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কোনও ফান্ড শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের একাউন্টে যাওয়ার কথা না।তাই এখনও পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞার বড় কোনও প্রভাব আছে বলে মনে হচ্ছে না।আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আহমেদাবাদে ১৮-২১ শে নভেম্বর একটি বৈঠক করবে, সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আলাপ হবে। যদিও এখন আইসিসি এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটা অনলাইন মিটিংয়ে।

আফগানিস্তানের নারী ক্রিকেট নিয়ে আইসিসি

আগামী গ্রীষ্মে তিন টেস্টের সিরিজের জন্য ইংল্যান্ড যাওয়ার কথা রয়েছে শ্রীলঙ্কার এবং সূচি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা আগামী বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ পুরুষদের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে।আফগানিস্তানে তালেবান সরকার নারীদের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করার পরও আফগানিস্তানকে আইসিসি নিষিদ্ধ করেনি।বিবিসি স্পোর্টের মতে এর কারণ আইসিসি দেখে আফগানিস্তানে কোনো সরকারি হস্তক্ষেপ নেই।

বৃহস্পতিবার বিবিসির স্টাম্পড পডকাস্টের সাথে কথা বলার সময়, আইসিসির প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালার্ডাইস বলেন, "আমরা আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে কথা বলেছি এবং অবস্থান হল যে তাদের দেশের আইনের মধ্যে কাজ করতে হবে”।“এখন আইসিসি বোর্ডের কাছে প্রশ্ন হল, আমরা কি আমাদের সদস্যদের দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মের মধ্যে ক্রিকেটের প্রচারের ক্ষমতায় সমর্থন করি? এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এখানে ইতিবাচক।"তালেবান সরকার আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে নারীদের জন্য খেলাধুলা নিষিদ্ধ।

নারীদের প্রতি দেশটির বৈষম্যের প্রতিবাদ হিসেবে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাথে এর আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে রাজি হয়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।তবে ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে অলিম্পিকে ক্রিকেটে আফগানিস্তান খেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী জিওফ অ্যালার্ডাইস বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির হাতে”।

চলতি বছরের অক্টোবরে আইওসি এলএ-২৮ এর সুপারিশ অনুমোদন করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে একটি নতুন খেলা হিসেবে অলিম্পিকে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।এর ফলে কমনওয়েলথ দেশগুলির পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলোতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করে তোলা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাজারে এটির সম্ভাবনার দুয়ার খোলা হচ্ছে মূল লক্ষ্য।

আইসিসি পুরুষ ও মহিলা উভয় প্রতিযোগিতার জন্য ছয় দলের ইভেন্টের সুপারিশ করেছিল যা অলিম্পিক কমিটি অনুমোন দেয়।২০২৫ সালের মধ্যে, এলএ-২৮ ও আইসিসি একটি প্রতিযোগিতার কাঠামো তৈরি করবে। সেইসাথে দলগুলি কীভাবে ইভেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, সেটাও ঠিক করবে।এখানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি লৈঙ্গিক সমতার কথা বলেছে, এটা তাদের অন্যতম বিবেচনার বিষয়।

অলিম্পিকের মূলনীতির একটি হচ্ছে যে কোনও ক্রীড়ায় পুরুষ ও নারী দুই বিভাগই অংশ নেবে।আফগানিস্তানের এই মুহূর্তে কোনও নারী ক্রিকেট দল নেই।তালেবান সরকার ২০২১ সালের অগাস্টে ক্ষমতা নেয়ার পর, দেশটির ২৫ জন নারী ক্রিকেটারের মধ্যে ২২জনই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

তালেবান সরকারের সাথে যোগাযোগের সময় আইওসি জোর দিয়ে বলেছে যে, আফগানিস্তানের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি (এনওসি) স্থগিতের ঝুঁকিতে পড়বে যদি নারীদের খেলাধুলায় প্রবেশাধিকারে বাধা অব্যাহত থাকে। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে আফগানিস্তানের অংশগ্রহণের বিষয়ে আইওসি এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি।

সূত্র : বিবিসি