চট্টগ্রামে ১৫ প্রকল্প উদ্বোধন আজ

চট্টগ্রামে ১৫ প্রকল্প উদ্বোধন আজ

সংগৃহীত

চট্টগ্রামে আজ তিনটি উপজেলাকে নতুন করে ঘোষণা করা হচ্ছে গৃহহীনমুক্ত হিসেবে। এ লক্ষ্যে গৃহহীন ২৬৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে। এই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন করা হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ৬৮৪টি ফ্ল্যাট। এভাবে চট্টগ্রাম জেলার ৯টি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়িত মোট ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১টি প্রতিষ্ঠানের ১টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দেশব্যাপী সব প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার নয় প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়িত ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও একটি প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, সিডিএর তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এ জন্য পতেঙ্গার রিং রোডের মুখে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্পই চট্টগ্রামের যোগাযোগের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামে যোগাযোগে একটা নতুন ধারা তৈরি হয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতর চট্টগ্রাম ৪ নম্বর ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন বলেন, গণপূর্ত অধিদফতরের অধীন চট্টগ্রামে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ২০ তলা বিশিষ্ট নয়টি ভবনে ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। সিজিএস কলোনিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল : পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এটি পরিচালনা করবে সৌদি প্রতিষ্ঠান ‘রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’। উদ্বোধনের পর সৌদি প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। টার্মিনালটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে দেশি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল অংশ থেকে ভাটির দিকে বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ড্রাইডক ও বোটক্লাবের মাঝে ২৬ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এ টার্মিনালে ৫৮৪ মিটার দৈর্ঘ্যরে তিনটি জেটি আছে।

জমিসহ ২৬৭টি পরিবারকে ঘর হস্তান্তর : চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীন ২৬৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব ঘর হস্তান্তর করবেন। তিনটি উপজেলা হলো বাঁশখালী, ফটিকছড়ি এবং রাঙ্গুনিয়া। এর মাধ্যমে এ তিন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে। এর আগে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, রাউজান, বোয়ালখালী, আনোয়ারা এবং হাটহাজারী উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মালেক বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে ১১টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। খুব শিগগিরই আরও চারটি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

বায়েজিদ-ফৌজদার হাট লিংক রোড : সিডিএ ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বায়েজিদ লিংক রোড নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করে। দুই লেনের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে পরিবর্তন হয় নকশার। উন্নীত করা হয় চার লেনে। ব্যয় ধরা হয় ৩২০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আগস্টে সংশোধিত প্রকল্পে ধরা হয় ৩৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৩ কোটি টাকা সিডিএর নিজস্ব তহবিল থেকে খরচের নির্দেশ দেওয়া হয়। নতুন এ সড়ক দিয়ে ঢাকা ও উত্তর চট্টগ্রামগামী যানবাহনগুলো যানজটমুক্ত দ্রুতই চট্টগ্রাম নগর থেকে বের হতে পারছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন। সাড়ে ১৬ কিলোমিটারের এই এক্সপ্রেসওয়ে লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড়, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড়, কাঠগড় থেকে ভিআইপি রোড এবং সি-বিচ থেকে ভিআইপি রোড পর্যন্ত ভাগ করে কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুরো এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৪টি র‌্যাম্প থাকবে। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে দুটি, টাইগারপাস মোড়ে দুটি, আগ্রাবাদ মোড়ে দুটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেড মোড়ে দুটি এবং কেইপিজেড মোড়ে দুটি। প্রতিটি র‌্যাম্প হবে দুই লেনের এবং একমুখী। চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নির্মিত হয়েছে ৩৮৯টি পিলার এবং বসানো হয়েছে ৩৮৯টি গার্ডার। তবে বিভিন্ন অংশে ওঠানামার জন্য ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণের কথা থাকলেও সেগুলো এখনো নির্মাণ করা হয়নি।

বাকলিয়া এক্সেস রোড : সিডিএ চট্টগ্রাম নগরের পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত নির্মিত ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাকলিয়া এক্সসেস রোড নির্মাণ করে। সড়কটি ব্যবহার করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতটি উপজেলার বাসিন্দারা দ্রুতই যানজটমুক্ত চন্দনপুরা হয়ে মূল শহর, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং চকবাজারে থাকা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে পারবে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে, কমবে ভোগান্তি। বাকলিয়া এক্সেস রোডটি ‘জানে আলম দোভাষ সড়ক’ নামে নামকরণ করা হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে শুরু হওয়া সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে ২১৭ কোটি টাকা হয়।