কাঞ্চনজঙ্ঘায় চোখ জুড়াতে পর্যটকের ভিড় এখন তেঁতুলিয়ায়

কাঞ্চনজঙ্ঘায় চোখ জুড়াতে পর্যটকের ভিড় এখন তেঁতুলিয়ায়

ছবিঃ সংগৃহীত।

পঞ্চগড়ে শীত পড়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি পড়ছে হালকা থেকে ঘন কুয়াশা। এরই মধ্যে জেলার তেঁতুলিয়া থেকে দেখা মিলছে ভারতের নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের। 

জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ এ পর্বতশৃঙ্গ দেখা গেলেও তেঁতুলিয়ার মহানন্দার পাড় আদর্শ স্থান হিসেবে পরিচিত। একদিকে শীতের আমেজ অন্যদিকে দেশের মাটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখতে পর্যটকের ভিড় এখন তেঁতুলিয়ায়।

 

কুয়াশা আর মেঘের কারণে কয়েকদিন থেকে দেখা যাচ্ছিল না। তবে সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে আকাশ পরিষ্কার থাকায় আবারো উত্তরাকাশে ভেসে উঠেছিল এ পর্বতশৃঙ্গ। দুপুরের পর মেঘ আর কুয়াশার আড়ালে চলে যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে নভেম্বরজুড়ে দেখা যাবে বলে জানায় তেঁতুলিয়া ট্যুরিস্ট পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা যায়, তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীপাড়ে জেলার মানুষ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দেশীয় পর্যটকদের ভিড়। এদের অনেকেই সূর্যোদয়ের সময় সাদা-শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে রাতেই এসে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাত যাপন করেছেন। কেউ আবার সূর্যোদয়ের আগেই বিভিন্নভাবে এসে তেঁতুলিয়ার মহানন্দার পাড়ে এসে বসে আছেন। বিশেষ করে পাশের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলশামারির উঠতি বয়সের তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন তেঁতুলিয়ায়। তারা কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার সমতলের চা বাগান, ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো, বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট ঘুরে মনের প্রশান্তি নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

জানা যায়, তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর ওপারেই ভারত আর নেপালের সীমানা। ভারতের সিকিম ও নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমানাজুড়ে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ এ পর্বতশৃঙ্গ উচ্চতা আট হাজার ৫৮৬ মিটার। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। তবে ভোরের আলোয় তেঁতুলিয়ার উত্তরাকাশে বেশ কাছাকাছি মনে হয় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য। পাসপোর্ট আর ভিসার মাধ্যমে ভারত যেতে না পারা প্রকৃতি প্রেমীরা শীতের আমেজে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ছুটে যাচ্ছেন তেঁতুলিয়ায়।

কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন ছাড়াও সমতলের চা বাগান, মহানন্দায় পাথর উত্তোলনসহ সবুজঘেরা তেঁতুলিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকরা।

 

বগুড়ার মাটিরডালি থেকে আসা ময়নুল ইসলাম বলেন, আমার দীর্ঘদিনের আশা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার। আজকে দেখতে পেরে খুব ভালো লাগলো। এটা দেখার আসলেই খুব শখ ছিল। তাই বগুড়া থেকে সোমবার এসে এখানে রাতে ছিলাম।

 

জয়পুরহাট পাঁচবিবি থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে এসেছেন তেঁতুলিয়ায়। এদের মধ্যে আজিজুল ইসলাম বলেন, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাঞ্চনজঙ্ঘা সম্পর্কে জেনেছি। দেশের মাটি থেকে দূর পাহাড়ের এ রূপ দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। সচক্ষে না দেখলে কেউ এর অনুভূতি বলতে পারবে না।

পাশের জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোরে গাড়ি নিয়ে সপরিবার এসেছি। অক্টোবরের শুরুতে একবার এসেছিলাম। সেদিন দেখা পাইনি। আজ দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে।

 

স্থানীয় ভ্যানচালক রশিদ বলেন, বাইরে থেকে ট্যুরিস্টরা এলে আমরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরাই। বিভিন্ন স্পট দেখাই। অনেক যাত্রী খুশি হয়ে আমাদের বকশিস দেন। বর্তমানে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও হরতাল, অবরোধের কারণে পর্যটকরা ঠিকমত আসতে পারছেন না।

 

তেঁতুলিয়া ট্যুরিস্ট পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাজেদুর রহমান  বলেন, শীত মৌসুমে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসছেন। আমরা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করি। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে সবাই আনন্দ পান। পরিবার পরিজন নিয়ে আসা পর্যটকরা এসে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে যান। কিন্তু আবহাওয়ার কারণে দূর থেকে আসা পর্যটকরা দেখতে না পেলে একটু মন খারাপ হয়। আকাশ ভালো থাকলে নভেম্বর পর্যন্ত পরিষ্কার দেখা যাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলে রাব্বি   বলেন, তেঁতুলিয়া এখন পর্যটনের একটি হাব হিসেবে গড়ে উঠছে। যারা নতুন করে এখানে আসছেন, বিশেষ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা, সমতলের চা, মহানন্দা নদীর পাথর তোলার দৃশ্য দেখেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। আবাসন সমস্যাসহ কোনো পর্যটক যেন হয়রানির শিকার না হন এজন্য আমরা পরিবহন সেক্টর, হোটেল মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। এর বাইরেও কোনো পর্যটকের সমস্যা হলে এবং আমাদের জানালে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেবো।