ওসির বদান্যতায় ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্কুলে নাইমা

ওসির বদান্যতায় ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে স্কুলে নাইমা

ছবিঃ সংগৃহীত।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে নানার সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তি করা ৭ বছরের শিশু নাঈমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেন থানার ওসি রাশেদুল হক। 

তিনি ওই শিশুকে রাস্তায় পেয়ে খাতা, কলম, স্কুল ব্যাগ ও নতুন জামা কাপড় কিনে দেন। পরে নিজ গাড়িতে করে স্থানীয় কালিশিরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে নিয়ে যান। একই সঙ্গে নাঈমার নানা বৃদ্ধ আব্দুর রহিমকে নগদ অর্থ ও একটি নতুন পাঞ্জাবি কিনে দেন ওসি।

 

বুধবার দুপুরে শিশু নাঈমাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও কালিশিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান, প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান।

 

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিশু নাঈমাকে সঙ্গে ভিক্ষা করে আসছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আব্দুর রহিম। জীবিকা নির্বাহ করতে প্রতিদিন তারা দুই থেকে তিনশ টাকা রোজগার করতেন। সম্প্রতি রাস্তায় তাদের সঙ্গে দেখা হয় চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল হকের। পরে তিনি তাদের আর্থিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেন এবং শিশু নাঈমাকে স্থানীয় কালিশিরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছেন।

শিশু নাঈমা বলেন, আমি এই প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়ে নতুন বই পেয়েছি। কোনোদিন ভাবিনি যে, স্কুলে যেতে পারব। নানার সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তি করতে গিয়ে ওসি স্যারের দেখা হয়। ওসি স্যার আমাকে দুটি নতুন জামা, জুতা, স্কুল ব্যাগ, খাতা কলমসহ শিক্ষা সামগ্রী কিনে দেন এবং স্কুলে নিয়ে ভর্তি করেন। আমি আজকে প্রথম ক্লাস করেছি। আমি স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে পেরে খুবই খুশি।

 

শিশু নাঈমার নানা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আব্দুর রহিম বলেন, আমি জন্মের পর থেকেই দু-চোখে দেখি না। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে অনেকদিন চলেছি। আমার দুই ছেলে ৫ মেয়ের মধ্যে আমার খোঁজ খবর কেউ রাখেনি। নাঈমার মা আমার কষ্ট বুঝে তার মেয়েকে আমার বাড়িতে দিয়েছে। বিনিময়ে আমি তাকে মাস শেষে ১ হাজার টাকা দেই। আমি দীর্ঘ ৪ বছর ধরে আমার নাতনিকে নিয়ে হাটবাজার ও গ্রাম গঞ্জে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছি। হঠাৎ ওসি স্যার আমাকে রাস্তায় পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে মানা করেন এবং নাতনিকে স্কুলে ভর্তি করেন। আমি এখন থেকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেব।

কালিশিরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, আমার শিক্ষকতার জীবনে এমন মানবিক ওসি দেখিনি। তিনি অসহায় নাঈমাকে নতুন জামাকাপড় পরিধান করিয়ে আমাদের হাতে তুলে দেন। আমরা চেষ্টা করব তাকে আলোকিত মানুষ গড়ে তুলতে। একইসঙ্গে নাঈমাকে উপবৃত্তিসহ সরকারি সব সেবা প্রদান করা হবে।

 

স্কুল কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, এখন বছর শেষের দিকে ভর্তির কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু ওসি সাবের অনুরোধে নাঈমাকে আপাতত নতুন বই দিয়ে লেখাপড়া সুযোগ করে দিয়েছি। আগামী নতুন বছরে তার নাম এন্ট্রি করা হবে।

 

চুনারুঘাট থানার ওসি রাশেদুল হক বলেন, চোখের সামনে অর্থের অভাবে একটি কন্যা শিশু লেখাপড়া করতে পারবে না সেটা আমি মেনে নিতে পারি না। তার লেখাপড়ার সব খরচ আমি নিজে বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ওসি জানান, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফেরাতে শিশু নাঈমাকে স্কুলমুখী করেছেন এবং তাদের নানা-নাতিনের জীবিকা নির্বাহে একটি টং দোকানের জন্য সমাজ সেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন।