বাতিল হচ্ছে আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা পেসো

বাতিল হচ্ছে আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা পেসো

ছবি: সংগৃহীত

আর্জেন্টিনায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডানপন্থী অর্থনৈতিক উদারবাদী হাভিয়ের মিলেই। সংকটে জর্জরিত দেশটির অর্থনীতিতে ‘শক থেরাপি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তাঁর পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া ও আর্জেন্টিনার মুদ্রা পেসো বাতিল করা।

রাজনীতিতে তিনি অনেকটাই বাহিরের মানুষ। তবে সংকট উত্তরণে তিনি যেসব অঙ্গীকার করেছেন, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতির খোলনলচে রীতিমতো বদলে যাবে।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেসোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। হাভিয়ের মিলেইয়ের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে ‘ডলারাইজ’ করা বা ডলারভিত্তিক করা। এর মানে হলো আর্জেন্টিনা পেসো বাতিল করে দিয়ে মার্কিন ডলারকে দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করবেন।

যদি সেটাই ঘটে, তাহলে আর্জেন্টিনা এমন একটি পথে হাঁটবে, যে পথে এত বড় একটি দেশ এর আগে কখনো হাঁটেনি। আর্জেন্টিনার জন্য এটি ‘আননোন টেরিটোরি’ বা অজানা একটি অঞ্চল। আর্জেন্টিনার নিজস্ব মুদ্রানীতির লাগাম কার্যত চলে যাবে ওয়াশিংটনে নীতিনির্ধারকদের হাতে।

তবে তা নিয়ে আর্জেন্টিনার মানুষ খুব বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে না। ৩১ বছর বয়স্ক রেস্তোরাঁ কর্মী ক্রিস্টিয়ান রয়টার্সকে বলেন, ‘মিলেই হলেন আমাদের নতুন মানুষ। তিনি কিছুটা অপরিচিত। তাঁর নীতি কিছুটা ভয় জাগায়। কিন্তু পৃষ্ঠা ওলটানোর জন্য এখনই সবচেয়ে ভালো সময়।’

হাভিয়ের মিলেইর চ্যালেঞ্জ অনেক। সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে অর্থ নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের একটি ঋণ নিয়ে রশি টানাটানি চলছে। মূল্যস্ফীতি ১৫০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। পুঁজি নিয়ন্ত্রণ কাজ করছে না।

আর্জেন্টিনার অনেক মানুষের কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল ‘কম ক্ষতিকর’ একজনকে বেছে নেওয়া। হাভিয়ের মিলেইর অর্থনৈতিক দাওয়াই যে বেদনার কারণ হবে, সেটা তাঁরা জানেন। কিন্তু অর্থনীতির যে সংকটে মাসা এবং তাঁর পেরন-পন্থী পার্টি দেশকে নিমজ্জিত করেছে, তার প্রতিও রয়েছে তীব্র ক্ষোভ। আর্জেন্টিনা এখন ঋণে ডুবে আছে, বিদেশ থেকে নতুন ঋণ পাচ্ছে না।

মিলেই বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। এসব তরুণ দেখেছেন তাঁদের দেশ এক সংকট থেকে আরেক সংকটে আরও বেশি তলিয়ে যাচ্ছে। ২০ বছর বয়সী আইরীন সোসা যেমনটা রয়টার্সকে বলছিলেন, ‘আমার মতো তরুণদের জন্য মিলেই হলেন ভবিষ্যৎ। আমাদের দেশে যা কিছু খারাপ ঘটেছে, তার সাথে ছিলেন মাসা।’

হাভিয়ের মিলেইয়ের জয় আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক মানচিত্র ও অর্থনীতির চালচিত্র বদলে দিতে পারে। সাথে প্রভাবিত করতে পারে শস্য, লিথিয়াম ও হাইড্রোকার্বনের ব্যবসা-বাণিজ্য। তিনি চীন ও ব্রাজিলের সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, তিনি ‘কমিউনিস্টদের সাথে’ ওঠাবসা করতে চান না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার পক্ষে তিনি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা প্রতিবেশী দেশের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে শুভকামনা জানিয়েছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তবে এ–ও আশা করেছেন যে আর্জেন্টিনাকে আবারও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেবেন হাভিয়ের মিলেই। তবে কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, মিলেইয়ের বিজয়ের দিনটি ওই অঞ্চলের জন্য ‘একটি বেদনার দিন’।