যুদ্ধ, সংঘাত বাড়লেও অস্ত্র বিক্রি কমেছে

যুদ্ধ, সংঘাত বাড়লেও অস্ত্র বিক্রি কমেছে

যুদ্ধ, সংঘাত বাড়লেও অস্ত্র বিক্রি কমেছে

২০২২ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ অস্ত্র নির্মাতার বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট বা সিপ্রি৷

অস্ত্র ও সামরিক সেবা বিক্রি থেকে কোম্পানিগুলো প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বা ৬৬ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে৷ তবে এই অর্থ ২০২১ সালের চেয়ে সাড়ে তিন শতাংশ কম বলে জানিয়েছে সিপ্রি৷২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ১০০টি শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে সিপ্রি৷ প্রতিবছরই তাদের আয় বাড়লেও ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো আয় কমেছে বলে সিপ্রি জানিয়েছে৷

সিপ্রি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক অস্ত্র নির্মাতা বিভিন্ন কারণে অস্ত্র উৎপাদন বাড়াতে পারেনি৷ কারণগুলোর মধ্যে আছে জনবল সংকট, দাম বৃদ্ধি, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা ইত্যাদি৷

ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহৃত বেশিরভাগ অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সংগ্রহশালা থেকে গেছে৷ সে কারণে অস্ত্র খাত বেশি আয় করতে পারেনি৷ এছাড়া বড় অস্ত্র কোম্পানিগুলো বিমান, জাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ব্যয়বহুল অস্ত্র তৈরির দিকে নজর দেয়াও আয় কমার একটি কারণ বলে জানিয়েছে সিপ্রি৷

শীর্ষ ১০০ অস্ত্র নির্মাতার তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪২টি কোম্পানি আছে৷ ২০২২ সালে তারা আয় করেছে ৩০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের চেয়ে ৭.৯ শতাংশ কম৷ তবে সিপ্রি ধারনা করছে, দীর্ঘমেয়াদি আদেশগুলো আগামী বছরগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷

শীর্ষ ১০০-তে থাকা ইউরোপের কোম্পানিগুলো ২০২২ সালে ১২১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ০.৯ শতাংশ বেশি৷

জার্মানির চারটি কোম্পানি সিপ্রির তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ২০২২ সালে তাদের আয় ছিল ৯.১ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ সালের চেয়ে ১.১ শতাংশ বেশি৷ চারটির মধ্যে একমাত্র ট্যুসেনক্রুপ কোম্পানির আয় ২০২২ সালে কমেছে৷ তাদের আয় ১৬ শতাংশ কমে ১.৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ ২০২১ সালের তুলনায় কম জাহাজ সরবরাহ করায় তাদের আয় কমেছে বলে সিপ্রি জানিয়েছে৷ শীর্ষ ১০০তে জার্মান কোম্পানিগুলোর অবস্থান: রাইনমেটাল (২৮তম), ট্যুসেনক্রুপ (৬২তম), হেনজলট (৬৯তম) ও ডিল (৯৩তম)৷

এদিকে, পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে সিপ্রি রাশিয়ার কোম্পানিগুলোর আয়ের বিস্তারিত তথ্য পায়নি৷ সে কারণে শীর্ষ ১০০-তে রাশিয়ার মাত্র দুটি কোম্পানি জায়গা পেয়েছে৷ এগুলো হলো রসটেক (দশম) ও ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন (৩৬তম)৷ তাদের আয় ১২ শতাংশ কমে ২০.৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ সিপ্রির প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক শিয়াও লিয়াং ডিডাব্লিউকে বলেন, রুশ সরকার অস্ত্র কোম্পানিগুলোকে পুরো তথ্য প্রকাশ করতে দেয়নি, কারণ সেক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সরকারের বক্তব্য প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে৷

এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের ২২টি কোম্পানি শীর্ষ ১০০-তে স্থান পেয়েছে৷ ২০২২ সালে তাদের আয় ৩.১ শতাংশ বেড়ে ১৩৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ ফলে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো এই অঞ্চলের কোম্পানিগুলোর আয় ইউরোপের চেয়ে বেশি হয়েছে৷

চীনের আটটি কোম্পানি তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ এরমধ্যে তিনটির অবস্থান শীর্ষ ১০-এ আছে৷ ২০২২ সালে চীনা কোম্পানিগুলোর আয় ছিল ১০৮ বিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অস্ত্র বিক্রির আয়ের ১৮ শতাংশ৷ একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই আছে চীন৷

তালিকায় থাকা মধ্যপ্রাচ্যের সাত কোম্পানির আয় ছিল ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি৷ সিপ্রি বলছে, এই কোম্পানিগুলো প্রযুক্তিগতভাবে সর্বাধুনিক নয় এমন অস্ত্র তৈরিতে পারদর্শী৷ সে কারণে তারা চাহিদা তৈরি হওয়ার পর দ্রুত তাদের উৎপাদন বাড়াতে পারে৷ তুরস্কের চারটি কোম্পানির এই সুবিধা থাকায় ২০২২ সালে তাদের আয় ২২ শতাংশ বেড়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে৷ তুরস্কের বায়কার কোম্পানি তাদের ড্রোনের কারণে প্রথমবারের মতো সিপ্রির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে৷ ২০২২ সালে তাদের বিক্রি বেড়েছে ৯৪ শতাংশ৷

সূত্র  : ডয়চে ভেলে