কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে : রিজভী

কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে : রিজভী

কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে : রিজভী

দেশে কারাগারগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।সোমবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এই অভিযোগ করেন।

রিজভী বলেন, ‘কেউ যাতে টু-শব্দও না করতে পারে সেজন্য কারাগারের ভেতরে-বাইরে চলছে বিরোধী দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীদের প্রতি নানাবিধ অমানবিক আচরণ। কারাবন্দীদের নির্যাতন করা হচ্ছে অবর্ণনীয় পৈশাচিক কায়দায়। বন্দীদের চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অসুস্থ বন্দীকে হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে কারা হাসপাতালে ফেলে রাখা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘কারাগারে দমবন্ধ করা সেলে দিন-রাত লকআপে রেখে গরু-ছাগলের খাবারের জন্য প্রযোজ্য অতি নিম্নমানের খাবার দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায় এড়ানোর জন্য গল্প সাজিয়ে মিথ্যাচার করছে।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, ‘তবে জেল হেফাজতে মৃত্যুর দায় এড়াতে পারবে না সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তারা। প্রতিটি মৃত্যু ও হত্যার জন্য তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদনটি তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সাম্প্রতিককালে ধর-পাকড় চালিয়ে হাজার হাজার বিরোধী নেতা-কর্মী-সমর্থককে দিয়ে কারাগারগুলো ভরে ফেলেছে। কারাগারে তারা অসুস্থ হচ্ছেন এবং ধুঁকে ধুঁকে সেখানে মরছেন।’

দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম হলেও সেখানে দেশের গণমাধ্যমের হিসাবে প্রায় ৮৮ হাজার বন্দী রয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘অবৈধ দখলদার সরকার তাদের দখলদারিত্ব ধরে রাখার জন্য পুরো দেশকে নরকপুরিতে পরিণত করেছে। ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপত্তা নেই। সরকারের প্রতিপক্ষদের জীবন রাষ্ট্রীয় নজরদারি বন্দুকের নলের নিচে বন্দী। দুর্বিনীত দুঃশাসনের করাল গ্রাসে দেশবাসী অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।’

একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির নেতা-কর্মীসহ চলতি বছরে জেল হেফাজতে প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে জেল হেফাজতে ৯৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সর্বোচ্চ। গত বছর জেল হেফাজতে মৃত্যু হয় ৬৫ জনের। যাদের বেশিভাগই বিএনপি নেতাকর্মী। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে চলমান ক্র্যাকডাউনের মধ্যে চলতি ডিসেম্বরে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিভাগই বিএনপি নেতাকর্মী।’‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মম নির্যাতন করে অসুস্থ করা হয়েছে,’ অভিযোগ রিজভীর।

বাজারে সিন্ডিকেটের নৈরাজ্য
রিজভী বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজ-রসুন, ডাল-চালের দাম নিয়ে চলছে নৈরাজ্য চলছে, কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই সরকারের। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন। সরকারের কোনো বিধি-বিধান তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সরকার যদি নির্বাচিত হতো বা জনগণের ভোটের প্রয়োজন পড়তো তাহলে দলীয় ব্যবসায়ীদের হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতো না।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন লোকসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির সরকার বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে… তারা ভোটারদের মনোতুষ্টির জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র।’‘আওয়ামী সমর্থক ব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ডে এক নিরব দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের কোটি কোটি মানুষ,’ বলেন রিজভী।

অবরোধ
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এক দফার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এবং অবৈধ তফসিল বাতিলের প্রতিবাদে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আগামীকাল মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। এই কর্মসূচি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের… এই কর্মসূচি মানুষের কথা বলা… এই কর্মসূচি মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা… এই কর্মসূচি প্রতিটি ব্যক্তি ও মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। এই কর্মসূচি এদেশের কোটি কোটি মানুষের সমর্থন রয়েছে।’

মামলা-গ্রেফতারের তথ্য
গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটি মামলায় ৪৩৬ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।