ইহকাল-পরকাল বরবাদ করে দেয় মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার

ইহকাল-পরকাল বরবাদ করে দেয় মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার

ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম ধর্মের নীতিমালাগুলো সৃষ্টির সুরক্ষার অনুকূলেই নাজিল হয়েছে। শরিয়তের বিধানের উদ্দেশ্যসমূহকে ‘মাকাসিদে শরিয়া’ বলা হয়। মাকাসিদে শরিয়া পাঁচটি, যথা: জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশ পবিত্রতা রক্ষা, ইমান আকিদা রক্ষা। মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার মানুষের ঘরসংসার, পরিবার-পরিজন, ধনসম্পদ, বিবেক-বুদ্ধি-জ্ঞান, মানসম্মান, জীবন ও জগৎ, ইহকাল ও পরকাল সবকিছু বরবাদ করে দেয়।

ইসলামে মানব হত্যা নিষিদ্ধ এবং হত্যার পরিবর্তে হত্যা জীবন সুরক্ষার জন্য। জুয়া ও চুরি নিষিদ্ধ এবং চুরির দায়ে হাত কাটা সম্পদ সুরক্ষার জন্য। সব ধরনের মাদক বা নেশাদ্রব্য নিষিদ্ধ, এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান জ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি সুরক্ষার জন্য। কারণ, মানুষের ‘আকল’ বা সুষ্ঠু স্বাভাবিক জ্ঞান সুরক্ষিত না হলে সে নিজের, পরিবারের, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের সবার ক্ষতি করবে। ব্যভিচার নিষিদ্ধ, নারী-পুরুষের বৈবাহিক সূত্রে পবিত্র বন্ধন বংশগতির পবিত্রতা সুরক্ষার জন্য। তা না হলে মানুষ আর ইতর প্রাণীর প্রভেদ থাকে না।

জগতের সব অপরাধের সঙ্গে তিনটি বিষয় সংশ্লিষ্ট, যথা: অবৈধ অর্থসম্পদ, মাদক ও অবৈধ নারীসঙ্গ। মানবসভ্যতা ধ্বংসের পেছনেও এই তিন কারণ বিদ্যমান থাকবে। কোরআন কারিমে বলা হয়েছে, ‘(হে রাসূল সা.!) লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহা পাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এগুলোর পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২১৯)

হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞানতার প্রসার ঘটবে, মদ্যপান ও মাদকের বিস্তার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে’। (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ৮০)

ইসলামের মৌলিক পাঁচটি নিষিদ্ধ বস্তুর অন্যতম হলো নেশা বা মাদকদ্রব্য, জুয়া তথা অসৎ উপার্জন ও অবৈধ নারীসঙ্গ। কিছু অপরাধ নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে; ইচ্ছা করলে তা ছাড়া যায়। মাদকের নেশা, জুয়ার নেশা ও অবৈধ নারীসঙ্গের আকর্ষণ এমন অপরাধ, যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না; সে নিজেই এসবের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে চাইলেই সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে না; অপরাধী অপরাধকে ছাড়তে চাইলেও অপরাধ অপরাধীকে ছাড়ে না, অপরাধ জগৎ থেকে অপরাধী বের হয়ে আসতে পারে না।

মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার অপরাধের আকর, যাতে চক্রবৃদ্ধি হারে অপরাধের শৃঙ্খল তৈরি হয়। কোরআুল কারিমে বর্ণিত হারুত ও মারুত এই মাদকের নেশায়, অবৈধ অর্থের লোভে ও অবৈধ নারীসঙ্গ পাওয়ার মোহে অন্ধ ও মাতাল হয়েই খুনখারাবিসহ নানা অপরাধের জালে আবদ্ধ হয়ে পাপের শিকলে শৃঙ্খলিত হয়েছিল। (সূরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১০২; তাফসিরে আজিজি ও মাআরিফুল কোরআন)

যে বস্তু ব্যবহারে নেশার উদ্রেক হয়, মানুষের মস্তিষ্ক বিকল হয়, স্বাভাবিক জ্ঞান ঠিকভাবে কাজ করে না; সেসব বস্তুই মাদক। মানবতার সুরক্ষার জন্য ইসলামে মাদক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, অপবিত্র ও হারাম। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেসব পানীয় নেশা সৃষ্টি করে, তা হারাম’। (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ২৪১)

‘নবীজি (সা.) রবিআহ গোত্রের প্রতিনিধিদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন: আল্লাহর ওপর ইমান আনা, সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা এবং রমজান মাসে রোজা পালন করা; গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ দান করা। চারটি কাজ বারণ করলেন: শুকনো লাউয়ের খোল, সবুজ কলসি এবং আলকাতরার পলিশকৃত পাত্র (মদপাত্র হিসেবে) ব্যবহার’। (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ৮৭)

মাদক, জুয়া ও ব্যভিচার সর্বধর্মেই নিষিদ্ধ, সব আইনেই গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুদ্ধ-সিদ্ধ ও পূত-পবিত্র, সফল ও সার্থক জীবনের জন্য মাদক, জুয়া ও ব্যভিচারের কবল ও ছোবল থেকে নিজেদের ও পরিবারকে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। দেশের উন্নয়নে ও জাতির সুরক্ষার জন্য এসব অসামাজিক পাপাচার, অপরাধ ও অপকর্মের বিষয়ে পারিবারিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।