ভয়াবহ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ঢাকার বাতাস

ভয়াবহ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ঢাকার বাতাস

ফাইল ছবি

ভয়াবহ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে ঢাকার বাতাস। গত এক মাসে ৩০ দিনই এ শহরের বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে ২৮ দিন ছিল অতিমাত্রায় অস্বাস্থ্যকর। গত নভেম্বর থেকে অধিকাংশ দিনই ঢাকার বাসিন্দারা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাস সেবনের মাধ্যমে শুরু করছে সকাল। 

মঙ্গলবার (০৯ জানুয়ারি) বিকাল ৫টায়ও পৃথিবীর ১০০টি বড় শহরের মধ্যে ঢাকার বাতাস ছিল সবচেয়ে দূষিত। এ সময়ে দূষণে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর, তৃতীয় চীনের উহান ও চতুর্থ অবস্থানে ছিল ভারতের দিল্লি। 

গত ১১ ডিসেম্বর থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩০ দিনের মধ্যে ঢাকার বাতাস সবচেয়ে কম দূষিত ছিল ২৯ ডিসেম্বর। ওই দিনও প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষতিকর অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম ২.৫) ছিল ১৪৫.৪ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া নিরাপদ সীমার চেয়ে ২৯ গুণ বেশি। আর গতকাল মঙ্গলবার বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল (সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত) ১৯০.২ মাইক্রোগ্রাম, যা নিরাপদ সীমার চেয়ে ৩৮ গুণ বেশি। এর মধ্যে গত ৮ জানুয়ারি রাত ১১টায় বিপজ্জনক পর্যায়ে দূষিত হয়ে ওঠে বাতাস। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৯ মাইক্রোগ্রাম, যা নিরাপদ সীমার চেয়ে ৫১.৮ গুণ বেশি। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলছেন, আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে শুধু বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু সাত বছর কমে যাচ্ছে। আমরা দেখছি শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে গেলে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব নগরীতে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। বায়ুদূষণের কারণে হাঁচি, কাশি, সর্দি, শ্বাসের টান বা হাঁপানি, অ্যালার্জিক কফ, অ্যালার্জিক অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ফুসফুস ক্যান্সারের মতো রোগগুলো হয়। 

তিনি আরও বলেন, বায়ুতে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) শ্বাসতন্ত্র দিয়ে রক্তস্রোতে মিশে গিয়ে লিভার, কিডনিসহ বিপাক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। ফলে কিডনি বিকল, লিভার বিকলসহ নানা জাতীয় ক্যান্সার বাড়ছে। এক বায়ুদূষণের কারণে সংক্রামক-অসংক্রামক দুই ধরনের রোগই বাড়ছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বায়ুর মানের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি সরকারি পর্যায়ে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। কিন্ত এর স্বাস্থ্যক্ষতি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক বেশি। দূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এক দমই অকার্যকর। দূষণ বন্ধে আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। যতদিন জনস্বাস্থ্যের জন্য যারা ঝুঁকি তৈরি করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা না যাবে, ততদিন দূষণ বন্ধ হবে না।