মেনোপজ

মেনোপজ

প্রতীকি ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা 

ছোট বেলায় আমাদের পাড়ায় দরবারের মা, ফৌজ নানার বৌকে দেখেছি। তার মাথা দিয়ে নাকি আগুনের হাওয়া বের হতো। সে রোদে আসতে পারত না। বুক ধড়ফড় লেগেই থাকত। এ নিয়ে সারা পাড়া হুলুস্থুল। তার জন্য কোথায় ঠান্ডা তেল পাওয়া যাবে তা নিয়ে তার স্বামী থাকত মহাব্যস্ত। আসলে নেপথ্যে ছিল মেনোপজাল সিমটম।

কেস নং ২: আদ্-দ্বীন হাসপাতালে এক ব্যক্তি স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন তার হঠাৎ গরম লাগে। তারপর কাঁপিয়ে শীত করে। সে সময় তাপমাত্রা প্রায় ১০৪ /১০৫ ডিগ্রি উঠে যায়। মেডিসিন ডাঃ তাকে সিটিস্ক্যান এমআরই সবই করেছে। কিন্তু ফল কিছুই হয় না। আসলে ওটাও মেনোপজাল সিমটোম।

মেনোপজ কি?

কোন নারীর স্থায়ীভাবে একবছর মাসিক বন্ধ থাকাকে মেনোপজ বলে। আর এই সময়ে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তা হলো মেনোপজাল সিমটোম। সব নারীর সিমটোম হয় না। যারা অস্থির মনের অথবা মানসিক অশান্তিতে থাকে তাদের বেশি হয়। যাদের মনে অল্পতেই অশান্তি হয় তাদের বেশি হয়।

কেন হয় উপসর্গ?

মেনোপজে শরীরের হরমনের তারতম্য হয়। যেমন সেক্স হরমন এসট্রোজেন, প্রজেটারোন একেবারেই কমে যায়। কিছু হরমন বাড়ে। গোনাডোট্রোফিন হরমন বেশি থাকে। যেমন লিউট্রোনাজিং ও ফলিকুলার স্টিমুলাইজিং হরমোন বেড়ে যায়। যার ফলে তার মাথা গরম, হটফ্লাস বেশি হয়। মনে হয় মাথা দিয়ে আগুনের ভাব বের হচ্ছে। একই সাথে কাঁপিয়ে জ্বরের মত আসে। আবার কিছুক্ষণ পর থেমে যায়। এভাবে দিনের মধ্যে একাধিক বার আসতে পারে। তাদের অনেক সময় ঘুম হয় না, বুক ধড়ফড় করে, প্রস্রাবে প্রদাহ হয়। ফলে ঘনঘন প্রস্রাব হয়। সাথে জ্বালা পোড়াও থাকে। মেজাজ রুক্ষ হয়। তারা মাঝে মাঝে  অস্বাভাবিক ব্যবহার করতে থাকে। তাদের সেক্সুয়াল অসুবিধা হতে পারে। যোনিপথ ড্রাইনেজ থাকে। সহজেই টেয়ার হয়ে যেতে পারে।

যাদের খুব বেশি বাড়াবাড়ি টাইপের হয় তাদের শর্ট টাইম চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে। দেয়ার আগে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার আছে। সবাইকে এই চিকিৎসা দেয়া যাবে না। তাদের রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস দেখতে হবে। ব্রেষ্টে মেমোগ্রাফি দরকার হলে FNAC করা লাগতে পারে। একটানা এই হরমন বেশিদিন খেলে জরায়ুতে এনডো মেট্রিয়াল ক্যান্সার হতে পারে।

মেনোপজে যেসব অসুবিধা হয়?

বোন ফ্রাকচার ও হাড়ের ডেনসিটি কমে যায়। স্ট্রোক হওয়ার চান্স থাকে। হার্ট এ্যাটাকের প্রভাব আগের চেয়ে বেড়ে যায়। কারণ যখন এসট্রোজেন থাকে তখন HDLকোলেস্টেরল বেশী থাকে যেটা উপকারী। আর মেনোপজে LDL কোলেস্টেরল বাড়ে যেটা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। এস্ট্রোজেন না থাকার কারণে কিছু এস্ট্রোজেন থাকে সেটা পোটেন্ট নয়; দূর্বল এস্ট্রোজেন যেমন- এসিটোন এবং এস্টিও।

চিকিৎসা কাউন্সিলিং করতে হবে। লাইফ স্টাইল বদল করতে হবে। ব্যালান্স ডায়েট চলবে। এক্সারসাইজ করতে হবে। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি নিতে হবে। প্রচুর পানি, শাক-শবজি খাবারে থাকতে হবে। যাদের সিমটোম বেশি তাদের তিন মাসের জন্য  MTমেনোপজাল থেরাপি দেয়া যেতে পারে।