পল্লী কবির হাসপাতাল প্রীতি

পল্লী কবির হাসপাতাল প্রীতি

ছবি: পল্লীকবি জসীম উদদীন

১৯৭২ সালের শেষের দিকের ঘটনা। পল্লীকবি জসীম উদদীন (১৯০৩-১০৭৬) ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে ঐ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ড. আশরাফ সিদ্দিকী ও মাহবুব তালুকদার (বর্তমান নির্বাচন কমিশনার)। হাসপাতালে থাকতে কবি পরিচিত রোগীদের কেবিনে কেবিনে ঘুরে সময় কাটাতেন। যে কারনে অনেক সময় তাঁকে ডাক্তার কিংবা নার্সের বিরাগভাজন হতে হতো।

কবির আরো একটা দোষ ছিল, হঠাৎ কাউকে না বলে হাসপাতাল ত্যাগ করতেন। একবার তাঁর ডাক্তার সমস্ত হাসপাতাল খুঁজেও তাঁকে পেলেন না। হাসপাতাল থেকে তাঁর কমলাপুর বাসায় খোঁজ করা হল। সেখানেও তিনি নেই। পরের দিন হাসপাতালে ফিরে মাহবুব তালুকদারকে জিজ্ঞাসা করলেন, তাঁকে (কবিকে) কেউ খোঁজ করেছিল কি না। তিনি বললেন, আপনাকে হাসপাতালে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে। কোথায় গিয়েছিলেন? কবি বললেন, গাবতলি। একটা গরু কিনতে।

মাহবুব তালুকদার সবিস্ময়ে বললেন,আপনি গাবতলিতে গেলেন গরু কিনতে? আপনি না অসুস্থ?

- অসুস্থ বলে কি সারাদিন হাসপাতালে বসে থাকতে হবে নাকি?

= তাহলে ডাক্তারকে বলে বাইরে গেলেই পারতেন।

- ডাক্তারদের বললে ওরা বাইরে যেতে দেন না।

= আপনি ডাক্তারদের সংগে দেখা করুন। নিশ্চয়ই কোন জরুরী প্রয়োজনে আপনাকে খোঁজা হচ্ছে।

কবি চলে আসলেন। আধা ঘন্টা পরে তিনি আবার মাহবুব তালুকদারের কেবিনে এলেন। মুখখানা থমথমে।  বললেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ডাক্তররা কবিদের দেখতে পারেনা। তুমি, আমি, আশরাফ সিদ্দিকী- আমরা তিনজনই ওদের চক্ষুশূল।

মাহবুব তালুকদার প্রশ্ন করলেন, ঘটনা কি?

-ওরা আমাকে ডিসর্চাজ করতে চায়।

= সে তো খুবই ভাল কথা, আপনি ভাল হয়ে গেছেন। গাবতলী থেকে গরু কিনে এনেছেন। হাসপাতালে কে পড়ে থাকতে চায়?

আসলে এটা ওদের ষড়যন্ত্র। আমাকে ওরা পায়না বলে এখান থেকে বের করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আমি বলেছি, কেবিনটা অন্তত আমার নামে বরাদ্দ থাক। আমি মাঝে মাঝে এসে চেক আপ করাবো, তাতে ওরা রাজি নয়। সেজন্যই বললাম, কবিদের ওরা দেখতে পারে না। 

মাহবুব তালুকদার সান্তনা ও সহানুভুতি দেখিয়ে বললেন, আপনি কবি হিসাবে এখানে আসেননি, রোগী হিসাবে এসেছেন। আপনার মত নামকরা কবি যে রোগী হিসাবে এখানে ছিলেন, এতে ওদের গর্ব করা উচিত।

কবি জসিমউদ্দিন চলে এলেন। বিদায়কালে মাহবুব তালুকদারকে বললেন, হাসপাতালে খুব আরামেই ছিলাম। লেখাপড়া করতে পেরেছি। কবিদের জন্য হাসপাতাল খুব ভাল জায়গা।       

--খালেদ ইকবাল