নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ১১০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ১১০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার নবাব ও মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের ১১০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি আজকের এদিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নবাব সুলিমুল্লাহর জন্ম ১৮৭১ সালের ৭ জুন। তার বাবা ছিলেন নওয়াব স্যার খাজা আহসানউল্লা (১৮৪৬-১৯০১) এবং দাদা ছিলেন নওয়াব স্যার খাজা আবদুল গণি (১৮১৩-৯৬)। এই দুজনই ঊনবিংশ শতকের বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। নিঃসন্দেহে পরিবারটি ছিল অভিজাত ও ধনাঢ্য। কিন্তু অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করতেন। তিনি আকাতরে দান-খয়রাত করে গেছেন।

নবাব সলিমুল্লাহ যিনি ১৯০৩ সালে বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকায় সফরে এলে আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বৈঠকে তার নিকট পূর্ব বাংলার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। নবাব সলিমুল্লাহ যিনি ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নওয়াব আলী চৌধুরীকে নিয়ে পৃথক দুটি মানপত্র নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

নবাব স্যার সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে গঠিত হয় ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’। নতুন প্রদেশ গঠনের সময় থকেই নওয়াব সলিমুল্লাহ, নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল-হকসহ অন্য নেতাদের দাবি ছিল ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা সফরে আসেন। সলিমুল্লাহসহ সহযোগী নেতারা হার্ডিঞ্জের সঙ্গে দেখা করেন পরক্ষণে তিনি আশ্বাস দেন, প্রদেশ বাতিলের ক্ষতিপূরণস্বরূপ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। ঢাকার মতো একটি অবহেলিত ও অনগ্রসর প্রাচীন নগরীতে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তখন অনেকের কাছেই ছিল অযৌক্তিক। পরবর্তীতে সকল বাধা কাটিয়ে আজকের এই প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রাখেন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর।

লোক মুখে কথিত আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সলিমুল্লাহ ৬০০ একর জমি দান করেছেন, এমন একটি মিথ ও মুখরোচক বক্তব্য মানুষের মুখপুস্তিকার পাতায় দেখা যায়। প্রকৃত অর্থে তখন দান করার মতো এতো জমি নওয়াব পরিবারের ছিলো না।

বাংলাপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার আওতায় পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের প্রশাসনিক দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য রমনা এলাকায় এর আগে অধিগ্রহণ করা ২৪৩ একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়। সে সময়কার ভূমিসংক্রান্ত পরিপূর্ণ রেকর্ড ঢাকা কালেক্টরেটে রয়েছে।

নবাব স্যার সলিমুল্লাহর মৃত্যু প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ কবি ফারুক মাহমুদ বলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে বড়লাটের সঙ্গে নবাবের মতবিরোধ দেখা দেয় এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এক পর্যায়ে বড়লাট নবাবকে অপমানজনক কথা বলেন। যা তার সহ্য হয়নি। নবাবের সঙ্গে সব সময় একটি ছড়ি থাকত। সে ছড়ি দিয়ে নবাব বড়লাটের টেবিলে আঘাত করেন। এ নিয়ে চরম বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে বড়লাটের ইঙ্গিতে তার দেহরক্ষী নবাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন এবং গুরুতর আহত হন। পরে নবাবের ১৯১৫ সালে ১৬ জানুয়ারি মৃত্যু হয়। নিশ্ছিদ্র প্রহরায় নবাবের মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। তার আত্মীয়স্বজনকেও মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। ১৯১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি সামরিক প্রহরায় বেগম বাজারে তাকে দাফন করা হয়। (সরকার শাহাবুদ্দিন আহমদ: আত্মঘাতী রাজনীতির তিনকাল; প্রথম খণ্ড, পৃ. ২২১)।