ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারের শহর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি

ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারের শহর দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি

আরাকান আর্মি প্রধান তোয়ান ম্রাত নাইং মিয়ানমারের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের দখল নেওয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

সামরিক জান্তাবিরোধী বড় তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অন্যতম এই আরাকান আর্মি। তাদের দখলে যাওয়া শহরটির নাম পালেতোয়া। এটি চিন রাজ্যে অবস্থিত।এই গোষ্ঠীর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানানো হয়েছে, সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় সামরিক বাহিনীর আর একটি ক্যাম্পও অবশিষ্ট নেই।যদিও, সেনাবাহিনীর তরফে এখনও কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পালেতোয়া শহরের নিয়ন্ত্রণ কেন গুরুত্বপূর্ণ

অঞ্চলটি বাংলাদেশেরও নিকটবর্তী, দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার।সীমান্ত লাগোয়া পালেতোয়ায় ভারতের অর্থায়নে কোটি কোটি ডলারের উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। দূরবর্তী অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত করতে সেখানে বিনিয়োগ করেছে ভারত।ফলে স্বাভাবিকভাবেই পালেতোয়ার ঘটনাপ্রবাহের দিকে দিল্লির তীক্ষ্ণ নজর থাকবে।

এখানকার কালাদান নদীর বন্দরটিও এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে, ভারতীয় সীমান্তে যাতায়াতের সড়ক ও নৌ-পরিবহনের নিয়ন্ত্রণও এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর হাতে চলে গেল।সেই সাথে সামরিক সরঞ্জামসহ একটা ঘাঁটি পেয়ে যাওয়ায় এখান থেকে রাখাইন রাজ্যে আরও আক্রমণ পরিচালনা করতে পারবে তারা।

বিদ্রোহীদের কাছে রাখাইন রাজ্যের প্রধান শহরগুলোর যে কোনওটি হারানো জান্তার জন্য এক বড় আঘাত হবে।তেমনই একটি শহর কায়াকদো, যেটির মধ্য দিয়ে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ে’র সাথে সারাদেশের সাথে যোগাযোগের মূল সড়ক পথটি গেছে। আরাকান আর্মি যাতে কায়াকদোর দিকে অগ্রসর হতে না পারে সেজন্য বিমান ও হেলিকপ্টার যোগে হামলা অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী।

আরাকান আর্মি কারা

মিয়ানমারের অনেকগুলো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। আরাকান আর্মি বা এএ এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন কিন্তু সমরাস্ত্রের দিক থেকে সবচেয়ে সুসজ্জিত বাহিনী তাদের।সেনাবাহিনীর সাথে তারা গত কয়েক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং এই সময়ে রাখাইন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সমর্থ হয়েছে।

এমনকি সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই রাখাইনে তাদের ভিত মজবুত ছিলো।দুই বছর আগে তারা দাবি করে, রাজ্যটির ৬০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে।কিন্তু, সেনা অভ্যুত্থানের সময় তারা যুদ্ধবিরতিতে ছিলো। আর সেনাবাহিনীও তাদের সাথে সংঘাতে যায়নি যাতে অন্য বিরোধীদের দমন করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে পারে।

গত অক্টোবরে আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনী বিরোধী সশস্ত্র জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ হিসেবে ব্যাপকতর লড়াইয়ে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। তারা ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্যে চাপে থাকা সেনাবাহিনীর ওপর সিরিজ আক্রমণ শুরু করে।এরপর গত ১১ সপ্তাহে চীনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অংশে জোটের হাতে পর্যুদস্ত হয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।সর্বশেষ গত শনিবার দেশের আারেকপ্রান্তে ভারত-ঘেঁষা পালেতোয়া শহরের মিওয়া ঘাঁটির শেষ সেনাচৌকিটি দখলে নেয় এএ। ২০২০ সালে একবার এই ঘাঁটিই ৪২ দিনের টানা লড়াইয়ের পর দখল করতে ব্যর্থ হয় তারা।

আরাকান আর্মি কী চায়

তবে, আরাকান আর্মির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়।তারা নিজেদের অর্জনকে আরও পোক্ত করতে পারে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারে।

তাদের ঘোষিত লক্ষ্য, ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে একরকম স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন।সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, যেটি সামরিক শাসনের বদলে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই সবচেয়ে ভালোভাবে অর্জন করা যাবে বলে তারা এখন মনে করছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।জান্তা আবার তার বাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করে বহুমুখী আক্রমণের বিপরীতে লড়াই চালিয়ে যেতে কতটা উদ্যোগী হতে পারে সেটিই পালেতোয়ার পতনের পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি