করোনায় গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতা

করোনায় গর্ভবতী মায়েদের সতর্কতা

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে ধারণা করা হয়েছে করোনাভাইরাস গর্ভবতী মায়েদের  জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পূর্বের অভিজ্ঞতা  থেকে বোঝা যায়, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ইবোলাভাইরাসের সময় গর্ভবতী মা ও বাচ্চাদের নানা সমস্যায় মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল।  করোনাভাইরাস এখনো তার পূর্ণ চরিত্র পুরোপুরি বোঝা যায়নি। তাই এটা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবেই ধরে নেয়া হয়েছে।      

গর্ভবতী মায়েরা যেন আক্রান্ত না হন সেজন্য তাদের অনেক  সাবধানে  থাকতে হবে। যেখানে লোক সমাগম সেসব জায়গা এড়িয়ে  চলবে। তারা নিজেকে রক্ষা করতে বেশিরভাগ সময় ঘরেই থাকবে। যদি বাহিরে যাওয়ার দরকার হয় তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেতে হবে। যেমন-মাস্ক ব্যবহার করবে, লোকজন থেকে অন্তত ৬ ফিট দূরত্বে থাকবে, হাঁচি-কাশি দেবার সময় মুখে টিস্যু পেপার অথবা রোমাল ব্যবহার করবে। যদি তারা জ্বর অথবা সর্দি-কাশি অনুভব করে তাহলে এক/দুইদিন অবজারভ করবে। তারপর যদি বেশি  হয় তখন তাদের করোনা টেস্ট করাবে এবং যেসব প্রাথমিক চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে সেগুলো করবে। যেমন গরম পানি বার বার পান করবে, স্টিমের ভাপ নিবে, বারবার লেবু চা খাবে, প্যারাসিটামল খাবে। এরপরেও যদি আরো বেশি  হয় তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তাদের ডেলিভারি হাসপাতালে  হওয়াই বাঞ্চনীয়। কারণ প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাচ্চাকে সে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে, সরাসরি  অথবা হাত দিয়ে চিপে অথবা  ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে দুধ পাত্রে রেখে পরেও খাওয়াতে পারবে। বাচ্চা কাছে বিছানায় রাখতে অথবা পাশের রুমে সিস্টারদের কাছে বেবি রুমেও  রাখতে পারবে।

প্রসূতী মায়েদের  গর্ভকালীন  সময় তাদের মানসিক  স্বাস্থ্য যাতে ভেঙ্গে না পড়ে তার জন্য পরামর্শ হলো, পরিবারের সবাই তার পাশে থেকে তাকে ভয়ভীতি দূর করে এবং প্রসবকালীন নিরাপদ  প্রসবে উৎসাহিত  করবে। সাধারণত মায়েরা গর্ভকালীন একটা ভয়ভীতির মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করে। করোনাভাইরাস সেটাকে বোঝার উপর শাকের আঁটির মতই জেঁকে বসেছে।

করোনাকালে জন্মনিয়ন্ত্রণ: সবদিক বিবেচনায় বাংলাদেশ অবস অ্যান্ড গাইনোকলোজি সোসাইটি OGSB করোনার এই সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিতে সবাইকে অনুরোধ করেছেন। এই অস্থির সময়টা বাচ্চা নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

করোনাভাইরাস মা ও শিশুর ওপর কেমন বিরুপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেটা সঠিকভাবে এখনো জানা যায়নি। তাই আপাতত কিছুদিন জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করলে হয়তো খারাপ কোন পরিস্থিতি রোধ করা যেতে পারে এবং বড় বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হতে পারে।

জন্মনিয়ন্ত্রনের অনেক পদ্ধতি আছে যেমন- কিছু স্থায়ী আবার আছে কিছু অস্থায়ী। স্থায়ী পদ্ধতি নারীদের জন্য টিউবেকটমি বা লাইগেশন আর পুরুষের রয়েছে ভ্যাসেকটমি। অস্থায়ী পদ্ধতির মধ্য সবচেয়ে সহজলভ্য পদ্ধতি হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি । এটা খেলে যাদের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না তাদের জন্য একটি চমৎকার পদ্ধতি। এর কার্যকারীতা ৯৯.৮ % । তাছাড়া আছে ইনজেকশন পদ্ধতি যা তিনমাস পর পর নিতে হয়। আরো আছে কপারটি যাদের একটি/দুটি বাচ্চা আছে ।

প্রথম বাচ্চা হওয়ার আগে কপারটি ব্যবহার না করাই ভাল, কারণ এই পদ্ধতিতে পেলভিক  ইনফেকশনের  সম্ভাবনা বেশি থাকে, ফলে ভবিষ্যতে  বাচ্চা  হওয়ার পথে বাধা হয়ে আসতে পারে। আরেকটা আছে বেরিয়ার মেথড বা কনডম পদ্ধতি। তবে এখানে ফেইলর রেট হাই প্রায় ১৮/২০%।  নিকটবর্তী  কোন ফ্যামিলি প্লানিং অফিস থেকে জেনে নিতে পারবে।