শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত

প্রতিকী ছবি

অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত। নিঃস্ব, নির্যাতিত ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা, তাদের প্রতি সহানুভূতি-সহমর্মিতার হস্ত প্রসারিত করা নিঃসন্দেহে বরকত ও পুণ্যময় কাজ। মানুষের কষ্ট, দুর্দশা দেখে যার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় না, সে প্রকৃত মুমিন নয়।

বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবর্দা অসহায় নির্যাতিত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতেন, তাদের দিকে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। শুধু তাই নয়, তিনি সমাজের বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামক একটি সেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন; যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল- দুস্থ-অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। নবুওয়াতের ২৩ বছরও তিনি মানুষের মাঝে প্রচার করেছেন মানবতার মর্মবাণী।

যারা নিঃস্ব অভাবী ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ায় তাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত এতিম ও বন্দিকে খাবার দান করে। তারা বলে, আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমাদের আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না। (সুরা দাহর, আয়াত ৮-৯)।

হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির সেবা কর এবং বন্দিকে মুক্ত কর; যাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। (বুখারি)। হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে (মুসলমান) ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীন মুসলমানকে কাপড় পরিধান করায়, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে খানা খাওয়ায়, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের ফলগুলো খাওয়াবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করায়, মহান আল্লাহতায়ালা তাকে এমন শরাব পান করাবেন যার ওপর মোহর লাগানো থাকবে। (আবু দাউদ)।

হজরত হারেসা ইবনে নোমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মিসকিনকে নিজ হাতে দান করা অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। (বায়হাকি)। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর শাসন আমলে একবার মদিনায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। প্রচন্ড খাদ্য সংকটে মদিনাবাসীর জীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠল। সে সময় হজরত উসমান (রা.) এর একটি ব্যবসায়িক কাফেলা বিশাল খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মদিনায় এসে পৌঁছল। এ খবর মদিনাবাসীর মধ্যে বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ল। মদিনার কিছু ব্যবসায়ী তাঁর কাছে হাজির হয়ে খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করল। হজরত উসমান (রা.) বললেন, যে আমাকে সাত শ গুণ লাভ দিতে পারবে, আমি তার কাছে এ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করব। কেননা একজন আমাকে সাত শ গুণ লাভ দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। এ কথা শুনে মদিনার ব্যবসায়ীরা নিরাশ হয়ে চলে গেল।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন