প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা নিয়ে চিন্তিত পাবনা অঞ্চলের কৃষক

প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা নিয়ে চিন্তিত পাবনা অঞ্চলের কৃষক

প্রচন্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা নিয়ে চিন্তিত পাবনা অঞ্চলের কৃষক

উত্তরাঞ্চলের পাবনা জেলা একটি কৃষি জলাধার হিসেবে পরিচিত। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষি ফসলের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে তাদের প্রধান ফসল ইরি-বোরো ধান। তারা এটা দিয়ে জীবিকা নির্বাহের স্বপ্ন দেখেন। এবারও তিনি ব্যর্থ হননি।

বেশকিছুদিন ধরে জেলাজুড়ে প্রচন্ডঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। এতে ক্ষেতের বোরো চারাগুলো সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে অনেক জায়গায় এমনকি বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এসব বীজ রক্ষায় চিন্তিত জেলার কৃষকরা।

শনিবার ও রোববার জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশেষ করে সদর উপজেলার মনোহরপুর, ভজেন্দ্রপুর, নারানপুর, ক্ষুদ্র মাটিয়া বাড়ি ও আটঘরিয়া উপজেলার বেরুয়ান এলাকার চারদিকে বীজতলার বিবর্ণ চিত্র। অনেক জায়গায় বীজতলা সম্পূর্ণ বা আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের স্বপ্নের এই চারা বাঁচাতে তারা নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষকরা এ প্রতিনিধিকে বলেন, " দেড় সপ্তাহেরও বেশি সময়য় ধরে জেলায় শীতের তীব্রতা অব্যাহত রয়েছে। দিনভর সূর্য্যরে দেখা মিলছে না। ঘন কুয়াশায় ঘেরা। কুয়াশা বৃষ্টির ফোঁটার মতো আছড়ে পড়ছে। স্থায়ী  শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কৃষকদের অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি বোরো বীজতলায় বিভিন্ন  রোগ দেখা দিয়েছে। তারা জানান, একটানা প্রচন্ড ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে চারাগুলো পুড়ে যাওয়া বা রোগের দিকে যাচ্ছে।

বারবার ওষুধ ছিটানো সত্ত্বেও বোরো চারা রোপণের জন্য প্রস্তুতকৃত বীজতলা ঠান্ডার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে কৃষকরা অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঘন কুয়াশার প্রভাবে বিভিন্ন এলাকার বোরো বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে এবং প্রায়ই নষ্ট হওয়ার সম্মুখীন।

জেলার সদর উপজেলার নারানপুর এলাকার কৃষক জহুরুল ইসলাম জানান, তিন বিঘা জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জমিতে বোরো বীজ প্রস্তুত করেছেন। এসব বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর ভালো মানের চারা উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। এদিকে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে বীজতলা সবুজ থেকে হলুদ হয়ে যাচ্ছে এবং চারা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিছু সম্পূর্ণ নষ্টও হয়ে গেছে। সেসব বীজ নষ্ট হলে কিভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে তা নিয়ে চিন্তিত এ কৃষক।

জেলার আটঘোরিয়া উপজেলার বেরুয়ান এলাকার আরেক কৃষক আবুল বাশার জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে  বোরো ধান চাষের জন্য ৫ শতাংশ জমিতে বীজতলা তৈরি করেছেন। তবে এই ঠান্ড আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশা চলতে থাকলে বীজকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। তারপর পুনরায় বীজ বপন করলে খুব একটা সুবিধা হবে না। তবে  দেখা গেছে, অনেকের জমির বীজ আংশিক বা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

পাবনা সদর উপজেলার ক্ষুদ্র মাটিয়া বাড়ি গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন, মনু মিয়া, রওশন আলম জানান, আমাদের বীজতলা সম্পূর্ণ বা আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা প্রায় ৮ বিঘা জমিতে বোরো চাষের জন্য এই সব বীজতলা তৈরি করেছি। কিন্তু এসব চারায় আর মধু আসবে না। তাই কেউ চারা কিনে কিছু জমিতে ধান লাগাবে আবার কেউ জমি ফেলে রাখবে বলে এসব কৃষক এমনিভাবেই জানালেন। এ অবস্থায় টানা প্রচন্ড ঠান্ড ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

তবে, সরেজমিন রিপোর্ট অনুযায়ী প্রচন্ড ঠান্ডা এবং ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু বীজতলা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নষ্ট হয়ে  গেছে। তবে কৃষি বিভাগে এমন কোনও তথ্য নেই বলে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা শাহ আলম জানিয়েছেন।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে বলেন.“ চলতি মৌসুমে পাবনা জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ২১৩ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ আবাদের জন্য ৩ হাজার ১৩ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা  তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ৫৬১ হেক্টর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ফলে কৃষকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

তিনি বলেন, চাহিদার চেয়ে বেশি বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। তাদের কোনো সমস্যা নেই। তিনি উল্লেখ করেন, যারা শেষ পর্যন্ত (নাবী) বীজতলা তৈরি করেছেন তাদের কিছু হারাতে পারে।’

অধিদপ্তরের ডিডি আরো বলেন, শীতের কুয়শা থেকে রক্ষা পেতে বীজতলা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। আর সকালে বীজতলার পানি বের করে আবার নতুন পানি দিতে হবে। সেই সাথে চারা থেকে কুয়াশা শিশির অপসারণের জন্য প্রতিদিন সকালে দড়ি টানানো গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, শীতকালে বীজতলা নষ্ট যাতে না হয় সেজন্য কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।