চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব

চট্টগ্রাম ডিসি পার্কে মাসব্যাপী ফুল উৎসব

সংগৃহীত

ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়াসহ দেশি-বিদেশি ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের সমারোহে সেজেছে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে সাগর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এলাকায় গড়ে তোলা ডিসি পার্ক। যেখানে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে ফিতা কেটে বেলুন উড়িয়ে এই ফুল উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদের সচিব মাহবুব হোসেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে.এম রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন, সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিনসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তারা জানান, এক সময়ে এই বেড়িবাঁধ এলাকা মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এই স্থানকে এখন ফুলের রাজ্য হিসেবে পরিণত করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান। এখন দূর হতে ওই স্থান থেকে রকমারি ১২৭ রকমের ফুলের সুগন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণ পিপাসু শতশত দর্শনার্থী ঘুরতে এসে মুগ্ধ হচ্ছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন বলেন, ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা পার্কটিকে সুসজ্জিত করেছি। সব মিলিয়ে এবারের মাসব্যাপী উৎসবটি অনেক বেশি উপভোগ্য হবে। যারা গতবার এসেছিলেন তারা এবারের পার্থক্য স্পষ্টই বুঝতে পারবেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, এই ফুলের রাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হলো ফুল উৎসব। মেলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পছন্দ হয় এমন সব অনুষঙ্গ যোগ করা হয়েছে। আশা করি সবার ভালো লাগবে এই উৎসব।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, মাসব্যাপী ফুল উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন চলছে। ডিসি পার্কটিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে নানা কাজ করা হয়েছে। চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যকে উপজীব্য করেই সাজানো হয়েছে অনুষঙ্গগুলো। তবে গতবারের চেয়ে আরও অনেক বেশি আড়ম্বরপূর্ণ হবে এবারের উৎসব

সীতাকুন্ড ইউএনও কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিসি স্যার এবারের ফুল উৎসবে ভিন্ন মাত্রা আনতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে।

ফুল উৎসবে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ। ফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক ফুলের পাশে লেখা থাকবে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত।

মাসব্যাপী এ আয়োজনকে আরও আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেলফি জোন ও পর্যটকদের জন্য থাকছে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে থাকছে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শন।

চট্টগ্রাম জেলার চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর জন্য থাকছে। আগত দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থা থাকছে। বিনোদন প্রেমীদের জন্য থাকছে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্নার, স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্ণা। থাকছে ট্যুরিস্ট শেড, নামাজের ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টলসহ পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা।

শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, প্লে-পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইনসহ থাকছে নানা আয়োজন। পুরো ফুল উৎসবকে ঝাঁকজমকপূর্ণ করতে আয়োজন করা হবে ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকছে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ জানুয়ারি সীতাকুন্ডের সলিমপুরে মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে ১৯৪ একর খাস জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে জেলা প্রশাসন। উদ্ধার করা জায়গায় মাত্র একমাসের মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী চট্টগ্রামে প্রথম ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সে সময় ১২২ প্রজাতির ফুলের চমকপ্রদ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছিল ফুল উৎসব’২০২৩

১০ দিনব্যাপী এ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন ডিসি পার্কে। মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জেলা প্রশাসনকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। এমন অনুপ্রেরণা থেকেই এ বছরও ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।