অভিবাসী বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়েনি: রামরুর প্রতিবেদন

অভিবাসী বাড়লেও রেমিট্যান্স বাড়েনি: রামরুর প্রতিবেদন

ফাইল ছবি

২০২৩ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের তুলনায় এর প্রবাহ বেড়েছে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে যদি মুদ্রাস্ফীতি অ্যাডজাস্ট করা হয় তাহলে প্রকৃত রেমিট্যান্স ৫ শতাংশ কমে গেছে। আর যে সংখ্যায় বাংলাদেশি শ্রমিক অভিবাসন করেছেন সে পরিমাণে রেমিট্যান্স বাড়েনি। গত বছর অভিবাসন বেড়েছে ১৩ শতাংশ আর রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। 

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেট রিমুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৩ : অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ শীর্ষক গবেষণাভিত্তিক বার্ষিক প্রতিবেদন এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করে। মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনের চেয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রবাসীদের আয় দেশে আসছে এটা সত্য। তবে তা যথাযথ মাধ্যমে আসছে না। অর্থাৎ হুন্ডি বা অন্য মাধ্যমে টাকা আসছে। গ্রামগঞ্জে প্রবাসীদের এই আয় না এলে তাদের আর্থিক চিত্র আরও খারাপ থাকত। আসলে ব্যাংকগুলোতে যে লুটপাট, অনিয়ম হয়েছে তাতে আর্থিক এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে, তারই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সে। 

বিএমইটির তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০২৩ সালে মোট ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন কর্মী অভিবাসন করেছেন। গত ৪৮ বছরের মধ্যে গত বছরে সর্বোচ্চ অভিবাসন হয়েছে, যা একটি মাইলফলক। গত বছর ৭৬ হাজার ৫১৯ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। ২০২২ সালে এটি ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। অর্থাৎ নারী কর্মী অভিবাসন প্রবাহ ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৩ সালে সব থেকে বেশি সংখ্যক অভিবাসী গেছে সৌদি আরবে। বছরটিতে মোট ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন অভিবাসন করেছেন, যা মোট অভিবাসনের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে শ্রম অভিবাসন গ্রহণে প্রথম অবস্থানে থাকলেও শ্রমিক গ্রহণের হার ২০২২ সালের তুলনায় গত বছরে ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিবাসন ছিল মালয়েশিয়ায়, শতকরা ২৭ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওমান, দেশটিতে অভিবাসন ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ, কাতারে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ও সিঙ্গাপুরে ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কর্মী অভিবাসন করেছেন। 

নারী অভিবাসনের ক্ষেত্রেও সৌদি আরবের অবস্থান শীর্ষে রয়েছে। গত বছর মোট নারী অভিবাসনের ৬৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ (৫০ হাজার ২৫৪ জন) সৌদি আরবে গেছেন। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জর্ডানে ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ (৭ হাজার ৮৩৮ জন)। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ ও ঢাকা ছিল আন্তর্জাতিক অভিবাসনের উল্লেখযোগ্য এলাকা। গত বছর কুমিল্লা থেকে মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৮৭০ জনের (মোট অভিবাসনের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ) আন্তর্জাতিক অভিবাসন ঘটেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। দক্ষতার দিক থেকে গত বছর পেশাজীবী কর্মী অভিবাসন করেছেন মাত্র ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ। আর স্বল্পদক্ষ কর্মী গেছেন ৫০ শতাংশ। 
জানানো হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ ছিল সৌদি আরব, যা এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রেরণকারীতে নেমে এসেছে। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। 

বক্তারা বলেন, অভিবাসীদের উপার্জন বৈধ পথে আনতে গত ২০২২ সালৈ রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। এরপর ২০২৩ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপরও ব্যাংক রেটের চেয়ে খোলা বাজারে বেশি দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার মানুষ অনিরাপদ উপায়ে উন্নত দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ভয়ানক পরিণতির শিকার হন। লিবিয়া বর্তমানে মানব পাচারের একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা সুপারিশমালা উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- ২০২৫-২০৩৫ সালকে অভিবাসন দশক ঘোষণা করা; জাতিসংঘ ঘোষিত ১৮ ডিসেম্বরকে অভিবাসী দিবস পালন করা; রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহার অনুযায়ী অভিবাসন খাতে বরাদ্দ রাখা; অনলাইনে অভিযোগের ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা; আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জলবায়ু অভিযোজনের পথ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের জন্য জলবায়ু বিষয়ক ফান্ড ও বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা রাখা; ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অভিবাসীদের আস্থা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিসহ গণমাধ্যমে প্রচারণা বৃদ্ধি করা।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন