টিকটক থেকে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের গান প্রত্যাহারের হুমকি

টিকটক থেকে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের গান প্রত্যাহারের হুমকি

ছবি: সংগৃহীত

ইউএমজি অভিযোগ এনেছে, শিল্পীদের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক না দিয়েই একটি সংগীতভিত্তিক ব্যবসা তৈরি করতে চায় টিকটক। পাল্টা অভিযোগে টিকটক বলছে, শিল্পী ও গীতিকারদের চেয়ে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ তাদের লোভ ও স্বার্থকে বড় করে দেখছে।

শিল্পী ও গীতিকারদের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক না দেওয়ায় একটি খোলা চিঠিতে টিকটক থেকে গান প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ। টিকটকের সঙ্গে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ।

শিল্পীদের পারিশ্রমিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ বেশ কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে এই চুক্তি আর নবায়ন করা হবে না বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইউএমজির একজন মুখপাত্র।

যদি এমনটাই হয়, তাহলে টিকটকে আর পাওয়া যাবে না টেইলর সুইফট, হ্যারি স্টাইলস, ড্রেক, অলিভিয়া রড্রিগোসহ অসংখ্য শিল্পীর গান।

'হোয়াই উই মাস্ট কল টাইম আউট অন টিকটক' শিরোনামের খোলা চিঠিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংগীত কোম্পানি ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ (ইউএমজি) জানায়, টিকটক প্রভাব খাটিয়ে ও ক্ষমতা ব্যবহার করে তাদের একটি অন্যায্য চুক্তি সই করাতে চাচ্ছে। এই চুক্তির মূল্য আগের চুক্তির চেয়েও কম, বাজারমূল্যের তুলনায় কিছুই না, যা তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।


ইউএমজি অভিযোগ এনেছে, শিল্পীদের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক না দিয়েই একটি সংগীতভিত্তিক ব্যবসা তৈরি করতে চায় টিকটক। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তুলনায় শিল্পীদের নামমাত্র পারিশ্রমিকের প্রস্তাব দিয়েছে টিকটক।

ইউএমজি আরও অভিযোগ এনেছে, কেবলমাত্র সাফল্য পেতে শুরু করেছেন এমন উঠতি শিল্পীদের গান বেছে বেছে বাদ দিচ্ছে টিকটক, কিন্তু ব্যবহারকারীদের ধরে রাখতে জনপ্রিয় শিল্পীদের গানগুলো রাখছে।

টিকটক বর্তমানে গান বানানো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নানারকম পরীক্ষামূলক কাজ করছে। গত বছর স্পটিফাই ও অ্যাপল মিউজিকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে 'টিকটক মিউজিক' চালু করা হয়। টিকটক মিউজিকে 'এআই সং' নামে একটি অপশন আছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা মনের মতো ধারণা ও প্রম্পট ব্যবহার করে নিজেরাই গান বানাতে পারবেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অবাধ ব্যবহারের দিকে আঙুল তুলেছে ইউএমজি। তাদের ভাষ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গান বানানোর নতুন টুল তৈরির মাধ্যমে টিকটক শিল্পীদের কাজের পরিধি সীমিত করে দিচ্ছে।

খোলা চিঠি থেকে জানা যায়, ইউনিভার্সাল মিউজিক কোম্পানির রাজস্বের মাত্র এক শতাংশ আসে টিকটক থেকে। এর মাধ্যমেই টিকটকের বৈষম্যমূলক নীতির ধারণা পাওয়া যায় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ডাচ-আমেরিকান মালিকানাধীন ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ বর্তমানে সংগীত জগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। বীটলস, বব ডিল্যান, এলটন জন, ড্রেক, স্টিং, দ্য উইকেন্ড, কেন্ড্রিক লামার, এসজেএ, আরিয়ানা গ্র্যান্ডে, জাস্টিন বিবার, অ্যাডেল, ইউটু, কোল্ডপ্লে, পোস্ট ম্যালোনসহ অসংখ্য জনপ্রিয় শিল্পীদের গানের স্বত্বাধিকারী এই প্রতিষ্ঠান।

এমনকি সম্প্রতি টিকটকে জনপ্রিয়তা পাওয়া সোফি এলি-বেক্সটরের গান 'মার্ডার অন দ্য ডান্সফ্লোর' এর স্বত্বাধিকারও ইউএমজির।

এই খোলা চিঠির জবাবে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে টিকটক একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, শিল্পী ও গীতিকারদের চেয়ে ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ তাদের লোভ ও স্বার্থকে বড় করে দেখছে।

ইউএমজির অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে টিকটক জানিয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিল্পীরা বিনামূল্যে নিজেদের মেধা প্রচার ও সাফল্যের সুযোগ পেতো, যা থেকে সরে গিয়ে ইউএমজি শিল্পীদের বঞ্চিত করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'অন্য সব লেবেল ও প্রকাশকদের সঙ্গে শিল্পীর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে চুক্তিতে পৌঁছেছে টিকটক। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে শিল্পী, গীতিকার ও ভক্তদের কথা ভাবছে না ইউনিভার্সাল, তারা কেবল নিজের স্বার্থ রক্ষার কথা ভাবছে।'

গত বছর ওয়ার্নার মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি করেছে টিকটক। তাদের চুক্তি আছে সনি মিউজিকের সঙ্গেও।

টিকটক একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেখানে ব্যবহারকারীরা স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও বানাতে পারেন, নানারকম সাউন্ড এফেক্ট ও লাইসেন্স করা গান জুড়ে দিতে পারেন ব্যাকগ্রাউন্ডে। চাইনিজ কোম্পানি বাইটড্যান্স এই যোগাযোগমাধ্যমের সত্ত্বাধিকারী। বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি। 
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও এনবিসি