ডিএনএ টেস্টে রাজবাড়ীর নিখোঁজ ৩ যাত্রীর মরদেহ শনাক্ত

ডিএনএ টেস্টে রাজবাড়ীর নিখোঁজ ৩ যাত্রীর মরদেহ শনাক্ত

সংগৃহীত

ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় রাজবাড়ীর নিখোঁজ তিন যাত্রীর মরদেহ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নিহতদের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

চলতি বছরের (৫ জানুয়ারি) শুক্রবার রাতে ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে রাজবাড়ীর দুই নারী ও এক যুবক নিখোঁজ ছিলেন। তারা সবাই রাজবাড়ী থেকে ‘চ’ বগিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। ডিএনএ টেস্টসহ অন্যান্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।

নিহত যাত্রীরা হলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোলের সাইদুর রহমান বাবুর মেয়ে এলিনা ইয়াসমিন (৪০), খানগঞ্জ বেলগাছির সরকার বাড়ির চিত্তরঞ্জন প্রামাণিকের মেয়ে চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমি (২৪) ও কালুখালীর মৃগী ইউনিয়নের বড়ইচারা গ্রামের আবদুল হক মন্ডলের ছেলে আবু তালহা (২৪)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন এলিনা, রত্না, ইকবাল বাহার ও তাদের সন্তান এবং সৌমি, তালহাসহ বেশ কিছু যাত্রী। কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছানোর আগে রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুনে ট্রেনটির চারটি বগি পুড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪ জন এবং এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোলের এলিনা ইয়াসমিন। বাবা সাঈদুর রহমান বাবুর কুলখানি শেষে ৬ মাসের শিশুসন্তান, বোন ডেইজি আক্তার রত্না, বোনজামাই ইকবাল বাহার ও তাদের দুই সন্তানসহ বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘চ’ বগিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন তারা। আগুনে এলিনার সঙ্গে থাকা স্বজনদের সবাই দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। ঘটনার ১০ দিন আগে এলিনা তার বাবার মৃত্যুতে বাড়িতে এসেছিলেন।

অন্যদিকে একইদিন ওই ট্রেনে ভাই-ভাবির বাসায় বেড়াতে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় যাচ্ছিলেন রাজবাড়ী খানগঞ্জ বেলগাছি সরকার বাড়ির চন্দ্রিমা চৌধুরী ওরফে সৌমি। এ ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। সৌমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে পড়ালেখা করতেন।

একই ট্রেনে রাজবাড়ী থেকে আবু তালহা ও আবু তাসলাম দুই ভাই ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার পর আবু তাসলাম ট্রেন থেকে নেমে যেতে পারলেও নিখোঁজ হন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু তালহা। ট্রেনের জানালায় হাত বের করে আকুতি জানিয়ে পুড়ে মারা যাওয়া ছেলেটাই ছিলেন আবু তালহা।

নিহত এলিনার মামাতো ভাই কাজী পলাশ বলেন, ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তার বোনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে এবং আজ ঢাকা মেডিকেল থেকে মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করবে।

রাজবাড়ী সদরের খানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুর রহমান সোহান নিখোঁজ সৌমি ও কালুখালী মৃগী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ মতিন আবু তালহার মরদেহ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত ও পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৫ জানুয়ারি যশোর থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে রাজবাড়ী থেকে ৬৫ জনের মতো যাত্রী উঠেছিলেন।