মূলকাটা পেঁয়াজের মত হালি পেঁয়াজের দামের আশায় পাবনার চাষীরা

মূলকাটা পেঁয়াজের মত হালি পেঁয়াজের দামের আশায় পাবনার চাষীরা

মূলকাটা পেঁয়াজের মত হালি পেঁয়াজের দামের আশায় পাবনার চাষীরা

মূলকাটা পেঁয়াজের মত হালি পেঁয়াজের দামের আশায় চাষীরা হালি পেঁয়াজ চাষে ব্যাপভাবে ঝুঁকে পড়েছেন।বর্তমান বাজারে মূলকাটা বা মুড়ি পেঁয়াজের দাম বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার কয়েকগুন দাম বেশি হওয়ায় পাবনার চাষিরা খুবই খুশি। এ জাতের  পেঁয়াজের মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। আর প্রায় মাস খানেকের মধ্যেই হালি পেঁয়াজ (আসল পেঁয়াজ) মার্কেটে আসা শুরু হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন। তাই তারা মূলকাটা পেঁয়াজের মতই হালি পেঁয়াজেও অনুরূপ দামের আশার স্বপ্ন দেখছেন। তবে পেঁয়াজ আমদানী করলে এমনটি দাম থেকে কৃষকরা বিব্রত হবেন বলে  বেশ শঙ্কিত।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পাবনা জেলায় এ বছর ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৬১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর  জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।  এর মধ্যে হালি পেঁয়াজের জন্য ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টরের বিপরীতে ৭ লাখ ৬০ হাজার মে.টন এবং কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজের জন্য ৮ হাজার ৬২০ হেক্টরের বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮১৮ টন। তবে গত বারের চেয়ে চলতি বছর ১শ’ ২০ হেক্টর জমিতে কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ বেশি আবাদ করা হয়। মূলকাটা পেঁয়াজের দাম বেশি পাওয়ায় আসল বা হালি পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানান। হালি পেঁয়াজ গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইপপরিচালক ড. জামাল উদ্দিন জানান, দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন। তার মধ্যে পাবনা জেলা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন যা  মোট উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া অ লে। এখান থেকেই  উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মে. টন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চাষিরা দু’টি পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। এর একটি কন্দ (মূলকাটা বা মুড়ি) ও অন্যটি চারা বা আসল (হালি) পদ্ধতি। মূলকাটা পদ্ধতিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয় অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ও হালি পদ্ধতিতে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে। মূলকাটা  পেঁয়াজ জানুয়ারি মাসে হাটে উঠতে শুরু করে। আর হালি  পেঁয়াজ বাজাওে আসে সাধারণত: মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।

বর্তমান প্রতি মণ কন্দ বা মূলকাটা পেঁয়াজ ৪ হাজার  থেকে ৪ হাজার ২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষিরা ভালো লাভবান হচ্ছেন।

চাষীরা জানান, গত ২-৩ বছরে জ্বালানি তেল ও সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এজন্য পেঁয়াজের দাম বেশি না হলে তারা ক্ষতির শিকার হন। তবে তুলনামূলক এ বছর পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

সুজানগর উপজেলার চাষীরা জানান, জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে বীজ কেনা বা বীজতলা তৈরি, কামলা, সার, নিড়ানী ও উত্তোলনসহ খরচ পড়ে বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তাই বাজার দরটা ভালো না হলে কৃষকের লোকসান গুনতে হয়। তাই ভালো দামের আশায় কৃষক স্বপ্ন বুনেন।

সাঁথিয়ার পেঁয়াজ চাষী মন্নু বিশ্বাস, আবেদ আলী,  বৈলাম খাঁনসহ চাষীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ কেউ হিসাব করে না। দেশে সবকিছুর দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের দাম যেই একটু বেশি হয়; তখনই হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু ক্রেতারা জানেন না কী পরিমান পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়। 

এবার ভালো দাম পেয়ে তারা খুশি। তবে সরকার যদি কৃষকের উৎপাদন খরচের কথা না ভেবে পেঁয়াজ আমদানি করে; তা’হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শঙ্কিত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাবনার উপ-পরিচালক ড. মোঃ জামাল উদ্দিন জানান,“দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বাড়ছে। গত মৌসুমে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা এবার উজ্জীবিত। এজন্য জেলায় এবার গত বছরের চেয়ে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলনও ভালো হবে এবং চাষিরা এবার মুড়ি পেঁয়াজের মত হালি পেঁয়াজেও লাভবান হতে পারবেন। উৎপাদন যাতে আরো বোশ হয়; সে জন্য আমাদের কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরাও কৃষকদের সহযাগিতা কওে যাচ্ছেন।