ওসি মাইনুদ্দিন পদ হারিয়েছেন

ওসি মাইনুদ্দিন পদ হারিয়েছেন

ছবি: পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাইনুদ্দিন

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাইনুদ্দিনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম রোববার (৯ আগস্ট) ওসি মাইনুদ্দিনকে সরিয়ে পাবনা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্তির নির্দেশ দেন। কোন কারণে হঠাৎ করে ওসি মাইনুদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হল এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার এমনকি তার অধিনস্ত অন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তা বলতে রাজি হননি। 

তবে ওসি মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল। এসব কারনে হয়তো বা তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে সাহর হচ্ছে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইবনে মিজান রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিনিধিকে জানান,  ওসি মাইনুদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে সত্য। তবে পাবনা পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন,“তাকে প্রত্যাহার নয়;সরিয়ে নেয়া হয়েছে।” তবে পুলিশের কোন কর্মকর্তা ‘সরিয়ে’ নেয়া বা প্রত্যাহারের সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে রাজি হননি।

এদিকে একাধিক সূত্রে জানা যায়, পাবনার বেড়া উপজেলার চার ইউপি চেয়ারম্যানের কয়েক মাসের মোবাইল ফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) সংগ্রহ করে তা কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন ওসি মাইনুদ্দিন। এতে ওই চেয়ারম্যানগণ ওসির উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। এ বিষয়টি নিয়ে তারা ওসির বিরুদ্ধে  প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এমনকি গত ২ জুন বেড়া উপজেলার চার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও পাবনার জেলা প্রশাসকের কাছে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে লিখিত আবেদনও করেন। তারা এ ওসির বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যানগণ অভিযোগ করেন “ওসি এসএম মাইনুদ্দিন তাদের তিন মাসের ফোনালাপের রেকর্ড সংগ্রহ করে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের আরেকটি গ্রুপের কাছে পৌঁছে দেন। অবশ্য ওসি ওই সময় এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যার প্রধান ছিলেন পাবনার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস (বর্তমানে ময়মনসিংহ পিবিআই এর পুলিশ সুপার।) কমিটিতে আরো দু’জনকে সম্পৃক্ত করা হয়। তবে তিন সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

এছাড়া ১৩ এপ্রিল ঢালারচর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতাকোরবান আলী ২২৯ বস্তা ভিজিডি চাল চুরি করে ধরা পড়েন র‌্যাবের জালে। এরপর র‌্যাব-১২ ডিএডি সোহরাব আলী বাদী হয়ে ওই রাতেই আমিনপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে গত ১৯ মে চাঞ্চল্যকর এই মামলাকে ‘তথ্যগত’ ভুল দাবি করে র‌্যাবের অভিযোগকে অসত্য বলে কোরবান আলী সরদারকে অব্যাহতি দিয়ে একটি বিতর্কিত ‘চূড়ান্ত তদন্ত’ প্রতিবেদন দেয় আমিনপুর থানা পুলিশ। ওসি মাইনুদ্দিন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান কোরবান আলীকে খালাস দেয়ার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশও করেন। পুলিশের এমন তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে অভিযানের সত্যতার বিষয়ে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপনের কথা জানান র‌্যাব-১২ এ কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম। র‌্যাব পুলিশের এমন পরস্পরবিরোধী অবস্থানের বিষয়ে সে সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ওসি মাইনুদ্দিন বহাল তবিয়তেই এতদিন ছিলেন।

নিজের ক্ষমতার দম্ভোক্তি করে কিছুই হবে না বলে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করেন। কাজীরহাট ঘাটে চাঁদার টাকা না পেয়ে নৌব্যবসাও বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার এই ওসির বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে ওসি মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে আনাচে কানাচে আলোচনা সমালোচনা চলে আসছিল বেশ কিছুদিন ধরে। যাই হোক তবে কোন কারনে ওসি মাইনুদ্দিনকে সরিয়ে নেয়া হল তা স্পষ্ট করা হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।