বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সাথে এনবিআর এর প্রাক-বাজেট সভা অনুষ্ঠিত

বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সাথে এনবিআর এর প্রাক-বাজেট সভা অনুষ্ঠিত

ছবি: প্রতিনিধি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের কর, শুল্ক ও ভ্যাট সংক্রান্ত জাতীয় রাজস্ব বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলার বিকাল আড়াই টায় আগারগাঁও অবস্থিত জাতীয় রাজস্ব ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম এর সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি), জাপান টোব্যাকো (জেটিআই), বিজিএমইএ, বিকেএমই এবং দেশীয় সিগারেট ম্যোনুফ্যাকচার এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রাক-বাজেট সভায় বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির উপদেষ্টা মুহাম্মদ আব্দুস সবুর, রংপুর বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম দিনার, আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরী লিমিটেডের সহকারি মহাব্যবস্থাপক আলী সাদাত খান মজলিশ, কারিকর বিড়ির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রী রাহুল দে এবং স্বপন কুমান নিতুদা। এসময় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট সভায় বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করা হয়।

প্রস্তাবসমূহ:

১.আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাজেটে বিড়িতে পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় শুল্ক বৃদ্ধি না করা এবং ট্যারিফ মূল্য হ্রাস করা।

২.সিগারেট ও বিড়ি একই গোত্রভ‚ক্ত হওয়া সত্তে¡ও দুটোর মাঝে বৈষম্য বিরাজ করছে এবং বিড়িকে অসম প্রতিযোগীতায় বাধ্য করা হচ্ছে। আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বিড়ির উপরে ১০ শতাংশ “উৎসে কর সংগ্রহ” (ধারা-১২৯) এর বিধান রয়েছে। তবে ধারা-১৫২ অনুযায়ী সিগারেটের উপর ৩ শতাংশ করের বিধান রয়েছে। বিড়ির উপর ১০ শতাংশ কর সমন্বয়যোগ্য নয়। কিন্তু সিগারেটের ৩ শতাংশ কর সমন্বয়যোগ্য। ধারা-১৬৩ অনুযায়ী বিড়ির কর ‘ন্যূনতম কর’ কিন্তু সিগারেটের ক্ষেত্রে তা গণ্য হয়নি। আইনের এই বৈষম্যসমূহ দূর করার বিনীত অনুরোধ করছি।

৩.ভ্যাট আইনে সিগারেটের জন্য ধার্য্যকৃত ভ্যাট পরবর্তীতে প্রদেয় ও সমন্বয়যোগ্য। কিন্তু বিড়ির জন্য ধার্য্যকৃত ভ্যাট অগ্রীম প্রদেয় ও অসমন্বয়যোগ্য।

৪.প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও নং-১৩৬-আইন/২০২৩/২১৩-মূসক, তাং-২১/৫/২০২৩, টেবিল-৩ এর ২৪.০১-এ ‘‘অপ্রক্রিয়াজাত তামাক” অব্যাহতি প্রাপ্ত থাকা সত্বেও কৃষকের নিকট থেকে কাঁচা তামাক পাতা ক্রয়কালে “যোগানদার” সেবার উৎসে মূসক কর্তনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কৃষক মূসক ৬.৩ ইস্যু করতে সামর্থ না হওয়ায় প্রতিনিয়ত আইনী বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা পুঞ্জীভুত হচ্ছে, সরকার প্রকৃত প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই প্রথম তফসীলে “কাঁচা ও সবুজ তামাক গাছ ও পাতা” অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী অথবা “যোগানদার” সেবার অব্যাহতি তালিকার মধ্যে “কাঁচা ও সবুজ তামাক গাছ ও পাতা” অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করছি। 

৫.যে সকল বিড়ি ফ্যাক্টরী অন-লাইন এর মাধ্যমে লাইসেন্স করেছেন সেই সকল লাইসেন্সধারী ফ্যাক্টরী কমপক্ষে দিনে এক কার্টুন (৫ প্যাকেট) ব্যান্ডরোল উত্তোলন নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে বোর্ড থেকে স্থায়ী আদেশ জারীর অনুরোধ করছি।

৬.কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ কর্তৃক নকল বিড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।

বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির উপদেষ্টা মুহাম্মদ আব্দুস সবুর জানান, প্রাচীন কুঠির শিল্প হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিড়ি শিল্পের অবদান অপরিসীম। বিড়ি শিল্প দেশের প্রাচীন শ্রমঘন কুটির শিল্প। এ শিল্পে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ১৮ লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত। বিশেষ করে সমাজের অসহায়, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিক বিকলঙ্গতা, নদীভাঙন ও চর এলাকার মানুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে ।

তিনি আরো জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিকার আন্দোলনের পাশাপাশি মেহনতি মানুষের কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিড়ি শিল্পকে শুল্ক মুক্ত ঘোষণা করেন। অসম শুল্কের ভারে বিড়ি শিল্প যখন পর্যুদস্ত। বিড়ি শিল্প ও এই শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের রক্ষার্থে চলতি বাজেটে আপনার সহযোগীতা কামনা করছি।