নারীর অধিকার

নারীর অধিকার

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

করিমন প্রান্তিক নারী। বিয়ের আট বছর গড়িয়েছে। তার স্বামী বাদল মিয়ার অল্প  কিছু জমি আছে যা সে চাষাবাদ করে। বাঁকি সময়টা অন্যের বাড়ি কামলা দিয়ে খায়। আজ সকালে সে লাঙ্গল জোঁয়াল নিয়ে বের হয়েছে তার একটি জমি চাষ করতে । মধ্যদুপুরে বাড়ি এসেছে। খুব ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় তার বুক শুকিয়ে আসছে। বাড়িতে এসেই হাঁক ডাক খাবার আন করিমন। ভাত তো কেবল উঠায়ে দিছি এখনো হয়নি তো। সারাদিন বাড়িতে বসে কি করিস? ভাত হয় না কেন?

আমি বসে থাকি নাকি? মুখে মুখে তর্ক বলেই তিন তালাক । হাড়িতে ভাত ফুটে ফ্যান পড়ে ভাত পুড়ে ছাই । করিমন বসে কাঁদছে। তার আট বছরেও কোন অধিকার  জন্মেনি । এটাই বেশির ভাগ নারীর অবস্থান।  নারীর অধিকারটুকু অর্জন করতে হলে তাকে যোগ্যতা, দক্ষতা, মেধা ও মননের  পরিচয় দিতে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে কেবল নারী তার অধিকার  আদায়ের  লড়াইয়ে অংশ নিতে পারে।

৮ই মার্চ নারী দিবস। এই দিবসে সবাই তাদের অধিকার  নিয়ে সোচ্চার  হয়। কেবল মাত্র একটি দিবসের মধ্যে  সীমাবদ্ধ  থেকে নারী অধিকার আদায়  করা যায় না। অধিকার অর্জন  করতে হয়; কেউ হাতে তুলে দেয় না। এজন্য নিজেকে তৈরি  করতে হয়। মোটামুটি  প্রতিটি নারীর  জীবন ঘাত প্রতিঘাতে গাঁথা। কারো জীবনই  কুসুমাস্তীর্ণ নয়। ছোট বেলা থেকে সে বৈষম্যের  শিকার ।  পরিবারে খাওয়া-দাওয়া, পড়ালেখা, পোশাক-আশাকে সব সময় ভাই শিশুটির সাথে বৈষম্য। সেখানেও তার অধিকার  প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাহলে তার ঠাঁই কোথায়?

কোরান শরীফে আল্লাহ তায়ালা মেয়ে শিশুকে তার ভাইয়ের অর্ধেক সম্পদ দেওয়ার কথা বলেছেন। আর সুযোগে অনেক ভাই তার বোনকে বিভিন্নভাবে ফাঁকি দিতে থাকে। আমাদের  শেষ নবী বিদায় হজের ভাষণে বলে গেছেন, স্বামীদের প্রতি যেমন স্ত্রীর অধিকার,সেইরুপ স্ত্রীদের প্রতি স্বামীর  অধিকার। 

নারীর নিজের শরীর,  সে বিয়ে করবে কিনা, বাচ্চা  নেবে কিনা সবটাই তার এক্তিয়ার। এখানে রাষ্ট্র, সমাজ কারো হস্তক্ষেপ চলবে না। এটাও তার নিজস্ব অধিকার। নারীর আর ১০ টা কাজের মধ্যে বিয়ে, সংসার করা,বাচ্চা নেয়া একটা কাজ মাত্র - একমাত্র  কাজ নয়। জগত সংসারে ছেলেদের মত আরো অনেক কাজ তার রয়েছে। নারীদের  মূল্যায়ন করে অনেক কবি সাহিত্যিক তাদের চরিত্রে পূর্ণতা ফুটিয়ে  তুলতে  চেয়েছেন।

যেমন রবীন্দ্রনাথের ঘরে বাইরে, সেক্মপিয়ায়ের হ্যামলেট, ম্যাকব্যাথ। সারা পৃথিবীতে নারী অর্ধেকের বেশি ।তারা সম্পদ হিসেবে শুধু  নয়; তাদের পেছনে ফেলে কোন উন্নয়ন  আসতে পারে না। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের  কথায় " বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”।

প্রান্তিক নারীদের  অবহেলা করলে পরিবেশ  বিপর্যয়  হবে। কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণের সফলতায় নারীদের ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া  তাদের জীবন সম্পর্কে  একটি পরিবেশগত  জ্ঞান রয়েছে। তাই নারীকে ক্ষতিগ্রস্থ চোখে না দেখে কাজে লাগালে সমাজ, রাষ্ট্র  উপকৃত হবে। নারীর অধিকারও সূরক্ষিত হবে। নারীদের  নিজের  শক্তির  উপর আস্থা নেই; তাই তারা ভীরু। ভিখারির  মত মানুষের  দয়ার পানে চেয়ে থাকে।

তোমাকে যিনি এ জগতে পাঠিয়েছে তার উপর ভরসা কর। সে আহার দেবে। তবে তোমাকে পরিশ্রম করতে হবে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। সুখ, দুঃখ সবই আল্লাহর দান । দুঃখ দিয়েছে বলে কি সেটা জয় করবার চেষ্টা  করবে না তাই কি হয়? তোমাকে  স্ব অধিকারে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে তাই করতে হবে।