রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে নেয়ার নির্দেশনা বিএনপির

রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে নেয়ার নির্দেশনা বিএনপির

ফাইল ছবি

রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, নির্দেশনা অনুযায়ী এবার সংগঠনের তৃণমূল পর্যন্ত ইফতার মাহফিল আয়োজন করা হবে। এসব ইফতারে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে আগামীতে দল পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আন্দোলনে থাকা নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে এমন বার্তাও দেয়া হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এবং সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে রমজানকে বিশেষ করে ইফতার মাহফিলকে সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে বিভাগভিত্তিক ইফতার মাহফিল করার যে আলোচনা ছিল, এসব বৈঠকে তা না করে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অর্থাৎ মহানগর, জেলা, উপজেলায় ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বরাবরের মতো এবারো প্রথম রোজায় এতিম এবং আলেম-ওলামাদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী, কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদের সম্মানেও ইফতার পার্টি দেয়ার চিন্তা রয়েছে দলটির। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকেও ইফতারের আয়োজন করা হতে পারে। দল ও অঙ্গসংগঠনের ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এসব ইফতার মাহফিল করতে চায় বিএনপি। বিএনপির অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকেও ঢাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন থাকবে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত দলের দু’টি ইফতারের শিডিউল চূড়ান্ত হয়েছে। ১ রমজান দিন এতিম ও আলেমদের সাথে ইস্কাটন লেডিস ক্লাব এবং ২৮ মার্চ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সন্মানে একই ভেনুতে ইফতার মাহফিল হবে। এ ছাড়া হোটেল ওয়েস্টিনে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার পার্টি দেয়া হবে।

প্রতি রমজানে দলের গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের কাছে ঈদ উপহার পাঠায় বিএনপি। জানা গেছে, এই কার্যক্রম এবারো অব্যাহত থাকবে। দুই হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে এই ঈদ উপহার পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিএনপির গত ছয় মাসের আন্দোলনে সারা দেশে দল ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ২৯ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারেও এবার ঈদ উপহার পাঠানো হবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি তৃণমূলে এই বার্তা দিতে চায় যে, বিগত আন্দোলন ঘিরে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে তারা রয়েছে।

এ দিকে সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনকে ঘিরে দলের কারাবন্দী নেতাদের মুক্তি এবং সংগঠন পুনর্গঠন ঘিরে ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছে বিএনপি। অঙ্গসংগঠনগুলোর নতুন কমিটি হবে এমন বার্তাকে ঘিরে পদপ্রত্যাশী নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন, নানাভাবে চালাচ্ছেন চেষ্টা-তদবির।

বিএনপির তথ্য মতে, নির্বাচনের আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ২৭ হাজারের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া মামলা ও গ্রেফতার এড়াতে অনেকে আত্মগোপনে, নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন। কেন্দ্রীয় এবং তৃণমূলের প্রায় অধিকাংশ নেতাই এখন জামিনে মুক্ত। ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুসহ অনেকে মুক্তি পেয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালামসহ অন্য নেতারাও বিভিন্ন মামলায় জামিন পেয়েছেন। এর ফলশ্রুতিতে বিএনপিও আস্তে আস্তে চাঙ্গা হচ্ছে।

এ দিকে ছাত্রদলের পর বিএনপির হাইকমান্ডের আরো কয়েকটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্তে পদপ্রত্যাশী নেতারাও এখন নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে আসছেন। সাথে আসছেন তাদের অনুসারীরাও। এতে করে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থিত অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয়গুলোতে উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নতুন আংশিক কমিটির পর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারাও নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন, শোডাউন করছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে শোডাউন করে সেখানে যাচ্ছেন সংগঠনের অন্য নেতারাও। এর ফলে দলীয় কার্যালয় এখন সরগরম।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদগুলোও পূরণ করা হচ্ছে। ১৩০টির মতো শূন্যপদের মধ্যে সম্প্রতি দু’টি শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। হাইকমান্ডের এমন উদ্যোগে এখন দলীয় কর্মসূচিতেও নেতারা সক্রিয় হচ্ছেন। সে কারণে দলের একটি সাধারণ কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটছে। গত শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগের কর্মসূচি ছিল। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এমন সাধারণ কর্মসূচিও ছোটখাট একটা সমাবেশের আদলে অনুষ্ঠিত হয়। ওই কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথি ছিলেন। এ ছাড়া একই দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বেইলি রোড এলাকায় লিফলেট বিতরণের কর্মসূচিতেও নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল।

দ্বাদশ সংসদ বাতিল এবং একদফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার চিন্তা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। তবে আন্দোলন সফলে এবার নতুন কৌশলে এগোতে চায় দলটি। সরকারবিরোধী আগামীর আন্দোলন কোন ফরম্যাটে হবে, কৌশল কী হবে- সেটা নিয়ে এখন বিএনপির অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে। দলের অনেকের অভিমত, নির্বাচনকে সামনে রেখে মূলত আন্দোলন বেগবান হয়। তাই আপাতত ইফতার মাহফিলের পাশাপাশি বিক্ষোভ, গণসংযোগমূলক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দলকে সক্রিয় ও চাঙ্গা রাখা হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেছেন, রমজানকে সাংগঠনিক মাস হিসেবে নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকমান্ড। আশা করছি এ মাস জুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দলও তাদের পাশে দাঁড়াবে। নতুন করে সবাই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে পারবে।