বহু গুনাবলী বিশিষ্ট মিষ্টি কুমড়ায় বেড়ার চাষীদের ভাগ্য বদল

বহু গুনাবলী বিশিষ্ট মিষ্টি কুমড়ায় বেড়ার চাষীদের ভাগ্য বদল

ছবি: নিউজজোনবিডি

এম মাহফুজ আলম, পাবনা:পাবনার বেড়া উপজেলার মিষ্টি কুমড়া চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওযায় দিন দিন মিষ্টি কুমড়ার চাষ  সেখানে বাড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক মিষ্টি কুমড়ার পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষ করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন। স্বল্প সময়ে, কম খরচে ও ভালো ফলন হওয়ায় সে অঞ্চলের কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন, পরিবারে আসছে সম্পদ। পরিবার নিয়ে তারা আসলেই খুশি।

কৃষিতে এই সফল পরিবর্তন কৃষকদের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। উর্বও বেলে-দোআঁশ মাটির কারণে বেড়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে মিষ্টি কুমড়া চাষের প্রবণতা বাড়ছে। কৃষি বিভাগ উচ্চ মুনাফা এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসইতার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হলে কুমড়া চাষে  বেড়া উপজেলার কৃষি অর্থনীতি বদলে যেতে পারে।

বেড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হযেছে। বেড়া পৌর এলাকার সম্ভুপুর গ্রামের কৃষক হানিফ সরদার জানান, কার্তিক মাসের মাঝামাঝি মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয় এবং ৯০ দিনের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া বিক্রির উপযোগী হয়। এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন।

চর নাকালিয়া গ্রামের কৃষক আমির আলী জানান,‘এ বছর ৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছি। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি।’ ফলন বেশ ভালো হওয়ায় প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভের আশা করছেন আমির আলী। ছোট পায়া গ্রামের আলতাফ সরকার জানান, এক বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়া চাষে খরচ হয় আট থেকে ৯ হাজার টাকা, ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই টন মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায়। ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করলে বিঘা প্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ পান চাষিরা। অন্যান্য ফসলের সাথে কুমড়া চাষ করলে কৃষকদের কোন বাড়তি খরচ হয় না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেড়া পৌরসভা এলাকা ছাড়াও উপজেলার ধালারচর, আমিনপুর, রূপপুর, সিংহাসন, হাটুরিয়া, নাকালিয়া, হরিরামপুর, মাসুমদিয়া ইউনিয়নে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়াসহ সবজি রাজধানীর কাওরান বাজারে বিক্রি করছেন বলে জানান কৃষকরা।

কৃষক আকবর আলী জানান, ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকে নগদে মিষ্টি কুমড়া কিনছেন। প্রতিটি কুমড়া ক্ষেত থেকে পাইকাররা আকার ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে কিনে নেন। সুতরাং, আমাদেও কোন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হবে না। পাইকারি বিক্রেতা পলাশ জানান, এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া অন্যান্য এলাকার তুলনায় সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা একটু বেশি। তিনি আড়াই লাখ টাকার মিষ্টি কুমড়া কিনেছেন যা থেকে এ বছর ৫০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন।

বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত কবির এ প্রতিনিধিকে জানান, চাষিরা ফুলকপি, আলু, মিষ্টি কুমড়া চাষের পাশাপাশি চাষ করছেন। তারা কম খরচ করে ভালো লাভ পাচ্ছেন। মিষ্টি কুমড়া চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে আসছে যাতে দিন দিন এখানকার কৃষকরা মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

 

 

পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষঙ্গ বলেন,“ ভিটামিন এ, বি-কমপ্লেœক্স, সি এবং ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার, ক্যারটিনয়েড এবং অন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের ধারক মিষ্টি কুমড়া। এ ছাড়াও বিটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই সবজিটি আমাদের দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধক কোষ গঠন করে।

মিষ্টি কুমড়ায় থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যেটা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  কোলেস্টেরল কম রাখতেও ভূমিকা পালন করে। আর্টারির দেয়ালে চর্বির স্তর জমতে বাধা প্রদান করে। ফলে মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে হৃদরোগও প্রতিরোধ করা যায়।

তিনি বিষদভাবে আরো বলেন,‘একটি মিষ্টি কুমড়াতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। যা আমাদেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে সর্দি-কাশি, ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। তাই চকচকে উজ্জ্বল চুল ও সুন্দর ত্বকের জন্য নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খাওয়া ভালো। মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে বিটাক্যারোটিন। বিটাক্যারোটিন এক ধরণে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরের ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দূষণ, স্ট্রেস ও খাবারে যেসব  কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেগুলোর কারণে ফি রেডিকাল ড্যামেজ হতে শুরু করে। ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজের ফলে শরীরের ভালো কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে এবং খারাপ কোষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সবুজ, কমলা, হলুদ রঙের সবজিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি পরিমাণে থাকে। তাই মিষ্টি কুমড়া ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে পারে।

পাবনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ডাঃ জান্নাতুল আরা বলেন,“ গর্ভবতী মায়েদের জন্য মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজ গর্ভবতী মায়েরা তাদের অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যর জন্য নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়া গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ এনামুল হক বলেন“এককাপ পরিমাণ রান্না করা মিষ্টি কুমড়া আমাদেও চোখের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অন্যান্য খাবার থেকে ১০০ গুণ বেশি কাজ করে। বিটাক্যারোটিন ও আলফা-ক্যারোটিনের মতো ক্যারটিনয়েডসমূহ চোখের ছানিপড়া রোধসহ চোখের রেটিনা কোষ রক্ষা করে। তাই চোখকে সচল ও সুস্থ রাখতে আপনার খাদ্য তালিকায় মিষ্টি কুমড়া যোগ করা উচিত। এছাড়া ওজন কমাতে কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে একটি উপযুক্ত খাবার। এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়ার উচ্চ পটাসিয়াম কন্টেন্টও খুব সুন্দরভাবে আপনার শরীরের বাড়তি মেদটুকু সযতেœ ঝরিয়ে দিতে সাহায্য করে। যারা তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিব্রত তারা নিঃসন্দেহে কুমড়া খেতে পারেন।

মেডিসিন বিশেষঙ্গ ডাঃ মোহাম্মদ আলী বলেন,“মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় তা সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভিাগের উপপরিচালক ড. মো জামাল উদ্দিন মিষ্টি কুমড়ার গুনাগুন সম্পর্কে বলেন,“মিষ্টি কুমড়া আমাদের দেশে পরিচিত একটি সবজি। এটি দেখতে যতটা সুন্দর, এর উপকারিতাও ততটাই বেশি। ভাজা, ভাজি, ভর্তা কিংবা ঝোল করে তো খাওয়া যায়ই, মিষ্টি কুমড়া দিয়ে তৈরি করা যায় সুস্বাদু হালুয়া। আপনি যদি মিষ্টি কুমড়া খেতে পছন্দ না করেন, তবে অনেক স্বাস্থ্যোপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবেন।”