কর্ণফুলীর অ্যামোনিয়াম ভর্তি ট্যাঙ্ক ঝুঁকিপূর্ণ

কর্ণফুলীর অ্যামোনিয়াম ভর্তি ট্যাঙ্ক ঝুঁকিপূর্ণ

এইচ এম আরাফাত

এইচ এম আরাফাত-

গত ৪ আগস্টে ঘটে যাওয়া লেবাননের রাজধানী বৈরুত বন্দরের কাছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সারের গুদামে বিস্ফোরনের ঘটনায় সৃষ্ট বিপর্যয়ের সামাল দিতে পারে নি সে দেশের সরকার।

ঐ ঘটনায় রাজধানী বৈরুতের কিছু এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ নিহতের পাশাপাশি এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।
এরচেয়েও  মারাত্বক বিস্ফোরণ ঘটতে পারে চট্রগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাড়ের ডিএপি প্লান্টে।
 
এধরণের দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে টেক্সাসে সার কারখানা ২০১৩ সালের বিস্ফোরণ যাতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০০১ সালে ফ্রান্সের তুলিসি রাসায়নিক প্লান্টে বিস্ফোরনে মারা যায় ৩১ জন।

লেবাননের ঘটনা বৈরুত বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম মজুদ ছিল ২৭৫০ টন। সে হিসেবে চট্টগ্রামে মজুদ অ্যামোনিয়াম দ্বিগুণেরও বেশি। আর এসব ট্যাঙ্ক বিস্ফোরিত হলে চট্টগ্রামে লেবাননের চেয়েও মারাত্নক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে ডিএপি প্লান্টে ৪টি বিশাল ট্যাংকারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মজুদ রয়েছে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম। যেগুলো যে কোনো সময় ঘটতে পারে বৈরুতের মতো ভয়াবহ বিস্ফোরণ। ঘটাতে পারে ব্যাপক প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতি।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে এই প্লান্টেও অ্যামোনিয়ামের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৫৫ জন গুরুতর আহত হয়। অনেক মানুষ ওই সময় শ্বাস নিতে না পেরে কর্ণফুলী নদীতে ঝাপ দিয়ে প্রাণে বাঁচে। মারা যায় নদী-পুকুরের অসংখ্য মাছ ও আশপাশের গাছপালা। পানি বিষাক্ত হয়ে যায়।

২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট দিনগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে কারখানার ১০-১১ জন শ্রমিক ও আনসার সদস্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে।কয়েক মিনিটের মধ্যে গ্যাস কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ে চট্টগ্রাম নৌ ও বিমান বন্দর এবং চট্টগ্রাম শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে নগরবাসী।

একইভাবে পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী থানা, আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলার মানুষ গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতেই আনসার সদস্যসহ গ্যাসে আক্রান্ত প্রায় ৫৫ জন নারী-পুরুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
 
প্লান্টের পাশেই রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড, মেরিন একাডেমিসহ বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কর্ণফুলী টানেলের নানা স্থাপনা ও শিল্প কারখানা। নদীর উত্তর পাড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম নৌ ও বিমান বন্দরসহ বিভিন্ন বাণিজ্য কেন্দ্র। যা অ্যামোনিয়াম বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় মাটির সাথে মিশে যেতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর তীরবর্তী চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার জনগণ দলমত নির্বিশেষে, প্লান্টটাকে নির্জন এলাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ জানানো হচ্ছে, নাহয় বিক্ষিপ্ত জোরালো আন্দোলন হবে। অতিসত্বর অ্যামোনিয়াম ভর্তি ট্যাঙ্ক গুলো সরানোর ব্যবস্থা করা হউক।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।