ব্যাংকে খোলাবাজারে ডলারের দর কমছে

ব্যাংকে খোলাবাজারে ডলারের দর কমছে

ছবি: সংগৃহীত

টাকার বিপরীতে ডলারের বেড়ে যাওয়া দর কমছে। রেমিট্যান্সের বিপরীতে ডলারের দর গত দু’দিনে ৪ থেকে ৬ টাকা কমেছে। গতকাল ব্যাংকগুলো ১১৪ টাকা ৫০ পয়সায় ১১৭ টাকায় প্রবাসী আয় কিনেছে। এক দিন আগেও যা ১১৭ থেকে ১১৯ টাকা ছিল। গত সপ্তাহে ছিল ১২০ থেকে ১২১ টাকায়। রেমিট্যান্সের ডলার দর কমায় আমদানি ও নগদ ডলারের দরও কমছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকা এবং গত মাসে তুলনামূলক ভালো রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বাজারের ডলারের সরবরাহ বাড়িয়েছে। এতে করে দর কমছে। সামগ্রিকভাবে ডলারের দর নিম্নমুখী। 

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন ব্যাংকারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ডলারের দর অনেক বাড়বে এমন ধারণা থেকে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পর্যায়ে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা ছিল। তবে নির্বাচনের পর দর না বেড়ে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একই জায়গায় স্থিতিশীল ছিল। দর আরও বাড়বে এ ধারণা থেকে যারা ডলার ধরে রেখেছিল, তাদের অনেকে দেশে আনতে শুরু করেছে। আবার আমদানি কমার ধারা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে, কারেন্সি সোয়াপ চালুর পর থেকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার কেনার প্রতিযোগিতা কমেছে। গত মাস থেকে কারেন্সি সোয়াপ তথা মুদ্রার অদলবদলের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে ডলার তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন কোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে বাড়তি ডলার থাকলে সোয়াপের মাধ্যমে নিয়ে নেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সোয়াপের আওতায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি ডলার তোলা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো এখন আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত ডলার কিনছে না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, টানা তিন মাস ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছে। রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি আছে। ফলে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। তবে আমদানি সে হারে বাড়ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দেখলে যা বোঝা যায়। এর প্রভাবে ডলারের দর কমছে। লোকসানের ভয়ে এখন ধরে রাখা ডলার ছেড়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের দর দ্রুত কমছে।

ব্যাংকিং চ্যানেলে স্থানান্তরভিত্তিক ডলারের পাশাপাশি নগদ ডলারের সরবরাহও অনেক বেড়েছে। ফলে নগদ ডলারের দরও কমছে। গতকাল খোলাবাজারে ১২০ থেকে ১২১ টাকায় ডলার বেচাকেনা হয়েছে। আগের দিনও যা ১২২ টাকা ছিল। গত সপ্তাহে ছিল ১২৪ টাকার ওপরে। এর আগে সর্বোচ্চ ১২৬ থেকে ১২৭ টাকায় উঠেছিল নগদ ডলার। মূলত ঘরে রাখা ডলার অনেকে ব্যাংকে জমা দিচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে বেশ। গতকাল ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের পরিমাণ বেড়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়েছে। যা ৯০ লাখ ডলারে নেমেছিল। মূলত বিদেশ ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে আরএফসিডি হিসাব খুলে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যাংকে জমা দিয়ে ৭ শতাংশের বেশি সুদ মিলছে। ফলে ঘরে রেখে দিয়েছিল এ রকম অনেকে এখন ব্যাংকে ডলার জমা করছে। আবার প্রবাসীর সুবিধাভোগীর নামেও বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলে ডলার রেখে ৭ থেকে ৯ শতাংশের বেশি সুদে মিলছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক সমকালকে বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ডলারের সরবরাহ অনেক বেড়েছে। আবার আরএফসিডি হিসাবে জমা ডলারে সুদহার বাড়ানো এবং প্রবাসীর সুবিধাভোগীর নামে বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলে জমার ওপর বাড়তি সুদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানি চেঞ্জারগুলোও ডলারের দর কমিয়েছে। আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় রেমিট্যান্সে ডলারের দর নির্ধারিত আছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর আমদানিতে ১১০ টাকা। তবে ব্যাংকগুলো ১২২ থেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত দরে রেমিট্যান্স কিনছিল। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ১২১ থেকে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতি ডলারে এক থেকে দেড় টাকা কমে যায়। গত সপ্তাহে আরও এক থেকে দেড় টাকা কমে ১১৮ থেকে ১২০ টাকায় নেমেছিল। গত সোমবারও একই রকম দরে বেচাকেনা হয়। তবে গত দু’দিনে ব্যাপক কমে গতকাল সর্বনিম্ন ১১৪ টাকা ৫০ পয়সায় নেমেছে। অবশ্য খারাপ অবস্থার কয়েকটি ব্যাংক গতকাল ১১৭ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনেছে। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ডলার বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১২৯ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ নামে ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে। এর আগে গত সপ্তাহে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।