ভুটানের রাজা ঢাকায় আসছেন আজ

চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ সস্ত্রীক ঢাকায় আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটিই হবে বাংলাদেশে কোনো দেশের শীর্ষ নেতার প্রথম সফর।

আজ সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভুটানের রাজাকে স্বাগত জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভুটানের রাজার সফরে নতুন করে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। সেগুলো হলো থিম্পুতে একটি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা, কুড়িগ্রামে ভুটানের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ভোক্তা সুরক্ষায় প্রযুক্তিগত সহযোগিতাবিষয়ক। এছাড়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতাসংক্রান্ত একটি চুক্তি আছে আমাদের সঙ্গে। সেটা নবায়ন করা হবে।’ 

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, সফরের প্রথম দিন আজ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন ভুটানের রাজা। সেখানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি। এদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পর্যটন, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি সমন্বয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ট্রানজিট, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির মতো বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। এছাড়া ভারতকে সঙ্গে নিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে উদ্ভূত চ্যালঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতার মতো বিষয়গুলোও গুরুত্ব পাবে। 

মঙ্গলবার ভোরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশ ভুটানের রাজা। পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন তিনি। বিকালে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বুধবার পদ্মা সেতু পরিদর্শন করবেন। এদিন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলেও যাবেন তিনি। 

সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের জন্য উড়োজাহাজে ঢাকা ত্যাগ করবেন রাজা জিগমে খেসার নামগিয়াল ওয়াংচুক। পরে সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন তিনি। নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সেখানে তাকে বিদায় জানাবেন। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ভুটানের রাজার সফরকালে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। ভারতকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুৎ খাতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হবে। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় এমবিবিএস কোর্সে ভুটানের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ৩০-এ উন্নীত করা হবে। ভুটানে ফরেন সার্ভিস একাডেমি স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে দেশটির কর্মকর্তাদের তিন বছরব্যাপী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ভুটানের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা উন্নয়নে ল্যাপটপ, ট্যাবসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস উপহার দেবে বাংলাদেশ। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক কাজী রকিবুল হক জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য ভুটানকে ১৯০ একর জমি দিচ্ছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেখানে বিনিয়োগ করবে।