স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার নিয়ে সুন্দরবনের কুমির বর্তমানে বলেশ্বর নদে

স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার নিয়ে সুন্দরবনের কুমির বর্তমানে বলেশ্বর নদে

ফাইল ছবি।

পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের নদীতে অবমুক্ত করা চারটি লবণ পানি প্রজাতির কুমিরের মধ্যে একটি পুরুষ কুমির ম্যানগ্রোভ এই বন ছেড়ে ১২৫ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে এখন পিরোজপুরের বলেশ্বর নদে অবস্থান নিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় কুমিরটি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমুল্লাহ বাজার সংলগ্ন বলেশ্বর নদে অবস্থান করছিল। গত চার দিন ধরে ১০ বছর বয়সের প্রাপ্ত বয়স্ক এই কুমিরটি সমুদ্রের জোয়ার ভাটার সময় বলেশ্বর নদের নদমুল্লাহ বাজার থেকে চরখালী ফেরী ঘাটের মধ্যেই থাকছে। 

গত ১৫ মার্চ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জোংড়া এলাকার নদীতে পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে অবমুক্ত করার চারদিন পর বাগেরহাটের পশুর নদী থেকে প্রথমে মোংলা নদীতে অবস্থান নেয়। এরপর ঘষিয়াখালী আন্তজার্তিক নৌ চ্যানেল, পানগুছি নদী হয়ে বলেশ্বর নদে অবস্থান নিয়েছে। 

২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই কুমিরটি মাদারীপুর জেলা থেকে উদ্ধার করার পর সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে এনে রাখা হয়। পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার নিয়ে অন্য তিনটি কুমির এখনো সুন্দনবনের নদীতে রয়েছে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)। 

আইইউসিএনের কর্মকর্তা মো. সরোয়ার আলম দীপু বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জানান, ‘এখন আমরা স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটারের মধ্যেমে দেখতে পাচ্ছি সুন্দরবন থেকে চলে যাওয়া কুমিরটি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার নদমুল্লাহ বাজার সংলগ্ন বলেশ্বর নদে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি কুমির প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলাচল করতে সক্ষম। গত ১৫ মার্চ পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জোংড়া এলাকার নদীতে পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে অবমুক্ত করার চারদিন পর বাগেরহাটের পশুর নদী থেকে প্রথমে মোংলা নদীতে অবস্থান নেয়।

এরপর ঘষিয়াখালী আন্তজার্তিক নৌ চ্যানেল হয়ে পানগুছি নদী হয়ে বলেশ্বর নদে অবস্থান নিয়েছে। কুমিরটি সমুদ্রের জোয়ার ভাটার সময় বলেশ্বর নদের নদমুল্লাহ বাজার থেকে চরখালী ফেরী ঘাটের মধ্যেই থাকছে। কুমিরটি আমাদের মনিটরিংয়ের মধ্যে রয়েছে। পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো অন্য তিনটি কুমির সুন্দরবনের নদীতেই রয়েছে। আশা করছি বলেশ্বর নদে চলে যাওয়া অপর কুমিরটি সহসাই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসবে। 

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত জীবনাচরণ জানতে এশিয়া মহাদেশে এই প্রথম চারটি কুমিরের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে সুন্দরবনের নদীতে অবমুক্ত করা হয়। ১৩ মার্চ পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা নদীতে প্রাপ্তবয়স্ক দুটি লবণপানি প্রজাতির স্ত্রী কুমির, ১৪ মার্চ সুন্দরবনের করমজল ও ১৫ মার্চ জোংড়া এলাকার নদীতে লবণপানি প্রজাতির দুটি পুরুষ কুমির অবমুক্ত করে আইইউসিএন এবং বন বিভাগ।

মুক্ত জীবনাচরণ, খাবার, রোগবালাই ও প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকাসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও জানাতে কুমির চারটির পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগিয়ে সুন্দরবনের নদীতে অবমুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১৫ মার্চ জোংড়া এলাকার নদীতে অবমুক্ত করা পুরুষ কুমিরটি চারদিন পর সুন্দরবন ছেড়ে যায়। এখন কুমিরটি ১২৫ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে পিরোজপুরের বলেশ্বর নদে অবস্থান করছে।