ঈদে পাবনার ব্যবসায়ীদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাপড়-জুতা বিক্রির আশা

ঈদে পাবনার ব্যবসায়ীদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাপড়-জুতা বিক্রির আশা

ছবি- নিউজজোন বিডি

এম মাহফুজ আলম, পাবনা: এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাবনার ব্যবসায়ীরা প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাপড়-জুতা বিক্রির আশা করছেন।জেলার নয় উপজেলায় স্থাপিত প্রায় ৪ হাজার তৈরি পোষাক ও সাধারণ পোষাক বিক্রিতা প্রতিষ্ঠান এবং ২ হাজার জুতার দোকান থেকে এই বিপুল পরিমান টাকার পণ্য বিক্রির প্রত্যাশা করছেন বলে জেলা ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তার জানান।

পাবনায় দাম বাড়লেও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ব্যাপকভাবে জমে উঠেছে ঈদেও কেনাকাটা। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশি শাড়ি, থ্রি-পিস ও পাঞ্জাবির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। লোকাল বুটিক, হাতে তৈরি শাড়ি, থ্রিপস ও পাঞ্জাবির দোকানে ভিড় অত্যধিক।

তবে গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে আরামদায়ক শাড়ি খুঁজছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া পোশাক ও জুতার  দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঈদের মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রঙের শাড়ি ও থ্রি-পিস কিনতে নারীদের উপচে পড়া ভিড়। সেই সঙ্গে পাঞ্জাবির দোকানেও ভিড়। ছেলেদের পাঞ্জাবি ছাড়াও শার্ট, গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, গ্যাবাডিংস, পাঞ্জাবি কিনতে ভিড় বাড়ছে।

তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর কাপড়সহ সব পণ্যের দাম বেশি বলে দাবি করেছেন ক্রেতারা। তারা বলেছেন  যে তারা তাদের পছন্দের কাপড় কিনতে পারে না। কারণ দামের সঙ্গে বাজেট না মিললে কেনা সম্ভব নয়। আর বিক্রেতারা দামের বিষয়টি শিকার করে বলছেন, এ বছর জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সবাই বিভ্রান্ত। সে তুলনায় কাপড়-জুতাসহ সব কিছুর দাম বেশি। কিন্তু তারা তাদের সাধ্যের মধ্যে বিক্রি করার চেষ্টা করছেন।

কহরের হুমাইরা মার্কেটের ক্রেতারা এ প্রতিবেদককে জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে আনন্দেও কোনো কমতি নেই। তারপরও সাশ্রয়ী ও পছন্দের শাড়ি কিনে খুশি তারা।

 ক্রেতারা আরও জানান, বাঙালির যেকোনো উৎসবে নারীদের প্রথম পছন্দ শাড়ি ও থ্রি-পিস। আর ঈদ উপলক্ষে শাড়ি বা থ্রি-পিসের বিকল্প হতে পারে না। ঈদে শাড়ি ও পাঞ্জাবির আবেদন শেষ হবে না। এ দু’টি পোশাকই এবারের ঈদে প্রাধান্য পেয়েছে।

এ বিষয়ে পাবনার ব্যবসায়ীরা এ প্রতিবেদককে জানান, এবার ঈদুল ফিতরে নারীরা ঘওে তৈরি জামদানি ও তাঁতের শাড়ি পছন্দ করছেন। দেশীয় তৈরি জামদানি ও তাঁতের শাড়ির কথা মাথায় রেখে এবারের ঈদে সব ধরণের শাড়ির সমাগম হয়েছে।

এদিকে পাবনা শহরের মার্কেটের আশপাশের এলাকার হাট-বাজারের দোকানে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ তাদের পছন্দের জিনিস কিনছেন। অনেক ক্রেতাই দাম শুনে এ দোকান ও দোকানে ঘুওে বেড়াচ্ছেন।

শহরের নিউমার্কেট, দইবাজার মোড় বাজার, কাজী মার্কেট, আলহাজ্ব সুপার মার্কেট, এআর প্লাাজা, এআর কর্ণার মার্কেটসহ কয়েকটি দোকানের বিক্রেতারা জানান, শুরুতে তেমন ভিড় ছিল না। গত সপ্তাহ থেকে ভিড়  বেড়েছে।  পোশাকের ডিজাইনেও রয়েছে নতুনত্ব। গরমের কথা মাথায় রেখে সুতি কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। আরামদায়ক সুতির কাপড় বিক্রি হচ্ছে বেশি। বিক্রেতাদের আর ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হয় না।

ইদ্রিস শেখ হকার মার্কেটে এসেছিলেন শিশুদের জন্য কাপড় কিনতে। তিনি বলেন,“'আমরা গরীব মানুষ। বড় মানষের দোকানে গিয়ে কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। নিজের জন্য না হলেও অন্তত: আমার সন্তানদের জন্য জামাকাপড় কিনেছি। বড় মেয়ের জন্য ৪৫০ টাকা এবং ছেলের জন্য ২৭০ টাকায় কিনেছি। এখন আমাদের জন্য না হলেও সমস্যা নেই।”

 

তবে বরাবরের মতো এবারও দাম বেশি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। প্রতিটি পোশাকের জন্য অতিরিক্ত দাম চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।

হুমায়রা মার্কেটে ঈদে রওশনারা খাতুন তার জামাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি কিনেছেন ১,২০০ টাকায়। তার মতে, তিনি পাঞ্জাবি কিনে খুশি। তবে এবার দাম বেশি। অনেক দোকান ঘুরতে হয়েছে।’

বাজার সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বিভিন্ন সাইজের কাপড় বিক্রি হচ্ছে ১,২০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়। নারীদের পোশাকের চাহিদা বেশি।

ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড় সেলাই ও মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার তারা কাপড়ের ধরণ ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দাম রাখছেন।

আলহাজ্ব সুপার মার্কেটের রাইসুল ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,"আমাদের ব্যবসা নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে। যত সময় যাবে বিক্রি বাড়বে। আমরা ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করছি। আমরা স্বল্প আয়ের শেষ ভরসা। আমরা সেভাবে বিক্রি করি।

পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সচিব আবদুর রাজ্জাক বলেন,“পাবনা জেলায় তৈরি পোশাক ও সাধারণ পোশাকের প্রতিষ্ঠিান প্রায় ৬ হাজার এবং প্রায় দু’হাজার জুতার দোকান রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকারও বেশি কাপড়-চোপড় ও জুতা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।”

 

পাবনা জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এই প্রতিনিধিকে বলেন, জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো, ঈদের কেনাকাটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মানুষ যাতে  কোনো ঝামেলা ছাড়াই বেঁচাকেনা করতে পারেন সেজন্য বিভিন্ন  গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিভিন্ন কাপড়ের  দোকানের আশপাশে অবস্থান করছেন। পুলিশ বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বাজার ও রাস্তাঘাটে নিয়মিত টহল দিচ্ছে।