বিদেশি ভাষা কেন শিখবেন, কোথায় শিখবেন, খরচ কত?

বিদেশি ভাষা কেন শিখবেন, কোথায় শিখবেন, খরচ কত?

ছবি:সংগৃহীত

বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নতুন ভাষা শেখাটাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা কোন একটি পেশায় রয়েছেন কিংবা যারা এখনো কোন পেশায় যুক্ত নন, তারাও ভাষা শেখায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এমনি একজন মারফিয়া হায়দার। জানান, স্প্যানিশ ভাষা শিখতে আগ্রহী তিনি।

এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কলারশিপের সুযোগ বেশি থাকায় ইউরোপে পড়তে যেতে চান তিনি। আর সেখানে স্প্যানিশ ভাষাভাষির মানুষ বেশি থাকায় এই ভাষায় দখল থাকলে যোগাযোগ করাটা সহজ হবে।

তিনি বলেন, "দেখা যায় যে যারা ফরাসি আর জার্মান ভাষা বোঝে, তাদের বেশিরভাগই স্প্যানিশ ভাষা বোঝে। আর এই ভাষাটি ইংরেজির কাছাকাছি হওয়ায় শেখাটাও তুলনামূলক সহজ।"

কোন ভাষার গুরুত্ব কেমন?
সারা বিশ্বে মানুষ প্রায় সাত হাজারের বেশি ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে দেখতে গেলে সবচেয়ে বেশি মানুষ কথা বলে চীনের ম্যান্ডারিন ভাষায়। এই সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। তার মানে কি এই ভাষাই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী বা এই ভাষাটিই কি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশ কিছু গবেষণাও হয়েছে। এমন এক গবেষণা করেছেন আবুধাবি ভিত্তিক গবেষক কাই চ্যান যিনি ইনসেড ইনোভেশন এবং পলিসি ইনিশিয়েটিভেল একজন ফেলো।

তিনি তার গবেষণায় ভাষার গুরুত্ব পরিমাপে ৫টি সূচক ব্যবহার করেছেন। এগুলো হচ্ছে ভ্রমণের ক্ষমতা, অর্থনৈতিক গুরুত্ব, সংলাপে নিয়োজিত হওয়ার ক্ষমতা, জ্ঞান এবং প্রচার মাধ্যমে ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার ক্ষমতা।

এসব সূচক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ইংরেজি ভাষাই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা। এরপরেই রয়েছে ম্যান্ডারিন, ফরাসি, স্প্যানিশ এবং আরবি ভাষা।

চীনের বিশাল অর্থনীতির কথা বিবেচনা করেও তিনি বলেছেন যে, ২০৫০ সালেও ইংরেজি সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ভাষাই থাকবে। তবে স্প্যানিশ তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে এবং ফরাসি ও আরবি চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান দখলে নেবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভাষা পছন্দের বিষয়টিও বদলে যায়।

তিনি বলেন, ৩০-৩২ বছর আগেও বাংলাদেশে রাশিয়ান ভাষা শেখার খুব ধুম ছিল। কিন্তু সেটি এখন আর নেই। এ ভাষা শিখতে আগ্রহী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও এখন অনেক কম বলে জানান তিনি। "ইংরেজি ভাষার পর গত ১০ বছর ধরে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে ফরাসি ভাষা শিখতে। এরপরে রয়েছে চীনা ও জাপানি ভাষা।"

তবে দেশে এখনো সবচেয়ে বেশি আগ্রহ রয়েছে ইংরেজি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে। সবচেয়ে বেশি মানুষ এখনো এই ভাষাটিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

কোথায় শিখবেন ভাষা?
বিদেশী ভাষা শেখার জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে ১৪টি ভাষা শেখানো হয়। এগুলো হচ্ছে ইংরেজি, বাংলা (বিদেশিদের জন্য), ফরাসি, স্প্যানিশ, জার্মান, তুর্কি, ইতালিয়ান, জাপানি, চীনা, কোরিয়ান, হিন্দি, ফার্সি ও আরবি।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ, গ্যেটে ইন্সটিটিউট, রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যান্ডারিনসহ বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে।

ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। এই প্রতিষ্ঠানটিতে ১৬-১৭টি ভাষা শেখানো হয়। এছাড়া গ্লোবাল এবং একুশে নামেও ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া দেশের প্রায় সকল জেলায় সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কোরিয়ান ভাষা শেখানো হয়।

কখন শিখবেন?
আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের বিদেশী ভাষার কোর্সগুলো সাধারণত এক বছর মেয়াদী হয়। সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১২০ ঘণ্টার ক্লাস হয়। সপ্তাহে দুই দিন চার ঘণ্টা বা ছয় ঘণ্টার ক্লাস হয়।

প্রতিবছর এপ্রিল মাসের দিকে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মে এবং জুন মাসের দিকে ভর্তি হওয়া যায়। ক্লাস শুরু হয় পহেলা জুলাই থেকে। তবে এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে এগুলো পিছিয়ে গেছে।

এছাড়া প্রত্যেক ভাষায় শর্ট কোর্স রয়েছে যেগুলো ৬০ ঘণ্টার কোর্স। এগুলো বছরের বিভিন্ন সময় হয়। প্রায় দেড় মাস পর পরই এই শর্ট কোর্সগুলোতে ভর্তি হওয়া যায়। তবে বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইন্সটিটিউটগুলোতে ভর্তি হওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।

কী যোগ্যতা দরকার?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের যেকোন কোর্সে ভর্তি হতে হলে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি বা ও' লেভেল পর্যন্ত হবে, মানসিকভাবে সুস্থ এবং বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।

এ বিষয়ে আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শিশির ভট্টাচার্য বলেন, "যারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে তারাই ভাষা শেখার কোর্সে ভর্তি হতে পারে।"

বিদেশিরাও চাইলে শিখতে পারবে, তবে সে ক্ষেত্রে অনুমতি লাগবে। প্রতিটি কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।

শিশির ভট্টাচার্য বলেন, প্রতিবছর ভাষা শেখার কোর্সগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সংখ্যক শিক্ষার্থী আবেদন করে। সেক্ষেত্রে সাধারণ কিছু বিষয়ের উপর পরীক্ষা নেয়া হয় বাছাই করার জন্য। এর মধ্যে থেকে ৩০০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে পরীক্ষাগুলো খুবই সাধারণ বিষয়ে হয়। যেমন দুই একটি অনুবাদ কিংবা কোন দেশের রাজধানীর নাম ইত্যাদি জানতে চাওয়া হয়।" তবে যেসব ভাষায় তেমন শিক্ষার্থী থাকে না সেসব ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষা হয় না। সরাসরি ভর্তি করা হয়।তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন যোগ্যতা বা বৈশিষ্ট্য থাকার দরকার হয় না।

ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল প্রফেসর মাসুদ এ খান বলেন, যে কারো ভাষা শেখার আগ্রহ থাকলে এবং অনুশীলন করলে সে ভাষা শিখতে পারে।

খরচ কেমন হবে?
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বাজেটের মধ্যেই থাকে। তবে বেসরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে একটু বেশি বাজেট থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটে এক বছর মেয়াদী কোর্সগুলো সম্পন্ন করতে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। তবে এটা বাংলাদেশিদের জন্য এবং এককালীন।

বিদেশিদের জন্য খরচ কিছুটা বেশি। তাদেরকে কোর্স প্রতি ৩০ হাজার টাকা গুনতে হবে। আর তিনমাস মেয়াদী শর্ট কোর্স গুলোর ক্ষেত্রে খরচ ভিন্ন।

ঢাকা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর মাসুদ এ খান বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভাষার শর্ট কিংবা দীর্ঘমেয়াদি কোর্সগুলো করতে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার মধ্যে করা যাবে।

এছাড়া গ্যেটে ইন্সটিটিউটে জার্মান ভাষা শিখতে চাইলে খরচ পড়বে ১১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিবিসি