কক্সবাজারে রাখাইনদের জলকেলি উৎসব শুরু

কক্সবাজারে রাখাইনদের জলকেলি উৎসব শুরু

সংগৃহীত

কক্সবাজারে নববর্ষ বরণে রাখাইন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব সাংগ্রেং পোয়ে বা জলকেলি উৎসব শুরু হয়েছে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধরা নেচে-গেয়ে একে অপরের শরীরে জল ছিটিয়ে এ উৎসব পালন করেন। এ যেন এক মহা আনন্দযজ্ঞ।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) কক্সবাজারের রাখাইন পল্লীগুলোতে শুরু হয়েছে তিন দিনের এ উৎসব।

নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্যান্ডেল। শুরু হয় সারিবদ্ধ পানি ভর্তি ড্রাম নিয়ে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে রাখাইন তরুণীদের অপেক্ষা। আর নানা সাজে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে দলবেঁধে এক-একটি প্যান্ডেলে ছুটে যাচ্ছেন নানা বয়সের মানুষসহ তরুণের দল। প্যান্ডেলে পৌঁছেই এক-একজন তরুণ তাদের পছন্দের তরুণীদের নিক্ষেপ করে পানি। আর তরুণীও পানি নিক্ষেপ করে প্রতিউত্তর দেয়। এভাবেই চলে একে অপরকে পানি নিক্ষেপের খেলা।

রাখাইন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস এই এই মঙ্গল জলে ধুয়ে মুছে যাবে পুরাতন বছরের সকল ব্যথা, বেদনা, গ্লানি, অপ্রাপ্তি আর অসঙ্গতি। আর নতুন বছর হবে শুচিতা বা নির্মলের। 

রাখাইন পঞ্জিকা অনুসারে ১৩৮৫ রাখাইন বর্ষের শেষ দিন মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল)। বুধবার (১৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে ১৩৮৬ রাখাইন বর্ষ। এই বর্ষ বিদায় ও বরণে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের ৭ দিনের ‘সাংগ্রেং’ বা বর্ষ বিদায় ও বরণ উৎসব পালন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী ১৪ এপ্রিল শুরু হয়েছে এই উৎসব। তিন দিনের জলকেলি উৎসবের মধ্যে দিয়ে ২০ এপ্রিল এই উৎসব শেষ হবে।

কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা মংথেলা রাখাইন জানান, রোববার (১৪ এপ্রিল) চন্দন মিশ্রিত জল দিয়ে বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৭ দিনের এই উৎসব। এলাকাভিত্তিক রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন বিহার ও ঘরে থাকা বৌদ্ধ মূর্তি স্নান করে এই উৎসবের শুরু করে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন সোমবার শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিহার প্রাঙ্গণে জড়ো হন রাখাইনরা। ওখানে ঠান্ডা শরবত পান এবং পঞ্চশীল গ্রহণ করে সবার মঙ্গল প্রার্থনা করা হয়। পঞ্চশীল হচ্ছে  একটি ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন।

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) তৃতীয় দিন রাখাইন শিশু-কিশোররা একে-অপরকে পানি নিক্ষেপ করেছে। এরপর বুধবার থেকে ৩ দিনের জন্যে জলকেলি বা পানি খেলা শুরু হল। 

কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীগুলোতে ২৫টির বেশি প্যান্ডেলে তিন দিনের এই পানি খেলা চলছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, চৌফলদন্ডী, টেকনাফ ও রামুতে রাখাইন পল্লী গুলোয় চলছে এ উৎসব।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানান, রাখাইনদের অন্যতম এই উৎসব সফল এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ করতে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাখাইন পল্লীগুলোতে পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে নজরদারি রয়েছে। উৎসবস্থলে রয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এ উৎসব শেষ হবে বলে তিনি জানান।