পুলিশের ওপর হামলা, মদ-অস্ত্রসহ আ.লীগ নেতার স্ত্রী গ্রেপ্তার

পুলিশের ওপর হামলা, মদ-অস্ত্রসহ আ.লীগ নেতার স্ত্রী গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি

জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার রেলওয়ে কলোনিতে বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ এক নারী কনস্টেবল। পরে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও ২০ লিটার দেশীয় মদ উদ্ধার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী লাখি খাতুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রোববার (২১ এপ্রিল) সকালে সিরাজগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক ব্রজেশ্বর বর্মণ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে সদর উপজেলার রেলওয়ে কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা দায়ের করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত মোছা. লাখি খাতুন পৌর এলাকার রেলওয়ে কলোনি মহল্লার আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম রানার স্ত্রী।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জরিনা বেগম নামে একজন নারী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার নাবালিকা মেয়ে নদী খাতুনকে (১৪) তার স্বামী সাইদুল ইসলাম বসতবাড়িতে আটকে রেখে বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন। এজন্য তার আইনি সহায়তা প্রয়োজন। পরে জরিনা বেগম থানায় গেলে সঙ্গে করে অফিসার ইনচার্জের নির্দেশক্রমে সিরাজগঞ্জ সদর থানার এস আই ব্রজেশ্বর বর্মনসহ সঙ্গীয় অফিসার ও নারী ফোর্স রেলওয়ে কলোনির সংবাদদাতার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বাল্যবিবাহের সত্যতা পায়।

পুলিশ বাল্যবিবাহ না দিতে নিষেধ করলে সংশ্লিট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললে একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পৌর এলাকার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রানার নেতৃত্বে আসামি সাইদুল ইসলাম (৪০), টুনি বেগম (৪১), আমেনা বেগম (৩৫), ইব্রাহিম (২৭), রেজা (৩০), বাবু ওরফে বড়বাবু (৩০), আশিক (২৫), নুর ইসলাম (৪৬), আসলাম (৩৫), হাসানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জন পুলিশের ওপর চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে এস আই ব্রজেশ্বর বর্মনসহ তার সঙ্গে থাকা অফিসার ও নারী পুলিশের ওপর হামলা করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে। সংবাদদাতা জরিনাসহ তার সঙ্গে থাকা ছেলে জীবন (১৬) ও নাবালিকা মেয়ে নদী খাতুনকেও (১৪) মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে পলাতক আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটের ঢিল ছুড়লে ইটের আঘাতে এস আই ব্রজেশ্বর বর্মনসহ তার সঙ্গে থাকা অফিসার ও নারী পুলিশ আহত হয়। পরে সঙ্গে থাকা বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে থানায় সংবাদ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামি রানার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার স্ত্রীকে বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র ও ২০ লিটার চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার হওয়া আলামতগুলোর মধ্যে ৩টি তলোয়ার, ২টি বড় ছোড়া ও একটি বল্লম রয়েছে।

 

সিরাজগঞ্জ সদর থানার উপপরির্দশক (এসআই) ব্রজেশ্বর বর্মণ বলেন, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ সময় সরকারী কাজে বাঁধা ও পুলিশের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে এএসআই মঈদুল ইসলাম, নারী কনস্টেবল ফেরদৌসী রহমান আহত হয়েছে। এ ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ১৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রানার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। একারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব্য হয়নি।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাল্য বিবাহ বন্ধের সময় পুলিশের ওপরে হামলার নেতৃত্বকারী আমিনুল ইসলাম রানার স্ত্রী লাখি খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। গ্রেপ্তারকৃত লাখি খাতুনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।