হিমালয়ে দ্রুত গলছে হিমবাহ, বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের

হিমালয়ে দ্রুত গলছে হিমবাহ, বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখোমুখী হয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।

মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, হিমালয় অঞ্চলে শতাধিক হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সেই বরফগলা পানিতে বাড়ছে হ্রদের আয়তন। যা বড়সড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

হিমালয় অঞ্চলে ১০ হেক্টরের (এক লাখ বর্গ মিটার) চেয়েও বড় হ্রদগুলির প্রতি চারটির মধ্যে একটির আয়তন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা শুরু হয়েছে ১৯৮৪ সাল থেকে। সাম্প্রতিক কালে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে। এর ফলে হিমবাহ গলা পানি হ্রদের দুকূল ছাপিয়ে বন্যার ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে ক্রমেই।

হিমালয় অঞ্চলে দীর্ঘসময়ের উপগ্রহ মানচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত ১০ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট ২৪৩১টি গ্লেসিয়াল লেক (হিমবাহ গলা পানি থেকে তৈরি হ্রদ) তৈরি হয়েছে ২০১৬-১৭ সালে। ১৯৮৪ থেকে ৬৭৬টি গ্লেসিয়াল লেকের আয়তন বেড়েছে। এর মধ্যে ১৩০টির অবস্থান ভারতে। এই ১৩০টির মধ্যে সিন্ধু নদী অববাহিকায় ৬৫টি, গঙ্গা নদী অববাহিকায় সাতটি এবং ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় রয়েছে ৫৮টি হ্রদ।

যে ৬৭৬টি হ্রদের উল্লেখ করা হয়েছে এর মধ্যে ৬০১টি হ্রদের আয়তন অন্তত দ্বিগুণ বৃদ্ধি পয়েছে। দেড় থেকে দুই গুণ আয়তন বেড়েছে ১০টি হ্রদের। দেড় গুণ আয়তন বেড়েছে এমন হ্রদের সংখ্যা ৬৫। উচ্চতার নিরিখে দেখা যাচ্ছে, চার থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় রয়েছে ৩১৪টি এবং পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতার উপরে রয়েছে ২৯৬টি হ্রদ।

হিমাচল প্রদেশে ৪০৬৮ মিটার উচ্চতায় গেপং গাথ গ্লেসিয়াল লেকের আয়তন বেড়েছে ১৭৮%। ১৯৮৯ সালে এই হ্রদের আয়তন ছিল ৩৬.৪৯ হেক্টর। সেটিই ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে ১০১.৩০ হেক্টর। অর্থাৎ বছরে ১.৯৬ হেক্টর আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত এসব লেকের আয়তন যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ওই অঞ্চলের জনবসতি প্রভাবিত হতে পারে। হিমবাহের পানিতে ভরা লেকে হঠাৎ যদি পানির পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে তা থেকে ভয়ংকর বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। প্রখ্যাত হিমবাহবিদ মিরিয়াম জ্যাকসন গত বছরেই বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, হিমবাহ গলে আরও বহু জলাশয় তৈরি হবে। বাড়বে বহু জলাশয়ের আয়তন। যা ভবিষ্যতে ওই অঞ্চলে বন্যা তৈরির ইঙ্গিতবাহী।

বিশ্ব জলবায়ু সংস্থা জানিয়েছে, গত বছর সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আবহাওয়াগত বিপর্যয়ের সাক্ষী থেকেছে এশিয়া। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির থেকেও এই মহাদেশে উষ্ণতা বৃদ্ধির হার বেশি। গত বছর এশিয়ায় আবহাওয়াগত বিপর্যয়ের সংখ্যা ৭৯টি। সেসব দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। ৯০ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন এসব দুর্যোগে।

পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বাংলাদেশেও। পরিবেশগত বিপর্যয়ের অনেক বড় ভুক্তোভুগি এই অঞ্চল। তীব্র গরম ও খরায় যেমন ভুগেছে মানুষ তেমনি বর্ষাকালে আবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দিচ্ছে। তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এই বিপর্যয় থেকে বের হতে পরিবেশ সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র: আনন্দবাজার