শ্রীলঙ্কা ঋণ শোধ করতে বিমানবন্দর লিজ দিল

শ্রীলঙ্কা ঋণ শোধ করতে বিমানবন্দর লিজ দিল

ফাইল ছবি।

মাত্রা কয়েক বছর আগে উদ্বোধন করা হয় শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে আধুনিক বিমানবন্দর হান্বানটোটা। কিন্তু সেই বিমানবন্দরের মালিকানা এখন রাশিয়া ও ভারতের হাতে ছেড়ে দিয়ে বাধ্য হল। কারণ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থা এখন এতটাই নাজুক যে তারা বিদেশী ঋণ শোধ করতে পারছে না। সরাসরি বলা যায় চীনের ঋণ শোধ করতে পারছে না। যার কারণে বিমানবন্দরটি লিজ দিতে হলো। এর আগেও তারা পুরো একটি নৌ-বন্দর লিজ দিতে বাধ্য হয়েছিল।

জানা যায়, ২০১৩ সালে উদ্বোধন হয় শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বিমানবন্দর। নির্মাণ খরচের সিংহভাগই দিয়েছে চীন। দক্ষিণ উপকূলে একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের নামে নামাঙ্কিত বিমান বন্দরটি তৈরি করতে খরচ পড়েছিল প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকাই দিয়েছিল চীনের এক ব্যাংক।

চড়া সুদে ওই অর্থের জোগান দিয়েছিল তারা। কিন্তু সেই ঋণ শোধ করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে ঋণে জর্জরিত দেশটির। ফ্লাইটের অভাবের কারণে হাম্বানটোটাকে ‘বিশ্বের খালি বিমানবন্দর’ বলে ডাকা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে আর্থিক লাভের মুখ দেখেনি এই বিমানবন্দর। এহেন পরিস্থিতিতে এবার বিমানবন্দরটির দায়িত্ব পেল ভারত ও রাশিয়ার দুই সংস্থা। শ্রীলঙ্কার সরকারী মুখপাত্র বন্দুলা গুণবর্ধন বলেছেন, ভারতীয় সংস্থাটির নাম শৌর্য অ্যারোনেটিক্স প্রাইভেট লিমিটেড। রুশ সংস্থাটির নাম এয়ারপোর্টস অফ রিজিয়নস ম্যানেজমেন্ট।

সুত্র জানায়, দুই সংস্থার সঙ্গে ৩০ বছরের চুক্তি হয়েছে বলেই জানা যাচ্ছে। তিনি আর কোনো আর্থিক বিবরণ দেননি তবে বলেছিলেন যে, আরো চারটি সংস্থা বিচ্ছিন্ন বিমানবন্দর পরিচালনায় আগ্রহ দেখিয়েছিল, যদিও এখানে বর্তমানে কোনও নির্ধারিত ফ্লাইট নেই।দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষতির মুখে পড়ে রয়েছে হাম্বানটোটা বিমানবন্দর। প্রথমদিকে অবশ্য ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক বিমান ওঠানামা করত। যদিও সংখ্যায় সেগুলো কমই ছিল। কিন্তু অচিরেই সেই সংখ্যা কার্যত শূন্য হয়ে পড়ায় বিমানবন্দরটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের অবকাঠামো প্রকল্পগুলির জন্য চীন থেকে প্রচুর ধার নিয়েছিলেন যা দ্রুত বাণিজ্যিক ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছিল। গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল হতে বেলআউট পাওয়ার পর থেকে, শ্রীলঙ্কা অনেক লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির বেসরকারিকরণের চেষ্টা করেছে।

দেশের মাত্তালা বিমানবন্দরটি পাখিদের জন্য একটি পরিযায়ী পথের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে এবং পাখির চলাচলের জেরে বেশ কয়েকটি বিমান মাটিতে নামতে বাধ্য হয়েছিল। শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী একবার বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে হরিণ, বন্য মহিষ এবং হাতিদের সরিয়ে দেবার জন্য শত শত সৈন্য মোতায়েন করতে বাধ্য হয়েছিল যাতে এটি অপারেশন চালিয়ে যেতে পারে।প্রথম বিদেশি এয়ারলাইন যেটি শ্রীলঙ্কায় কাজ করে সেটি হলো - এয়ার অ্যারাবিয়া, কিন্তু তারা ছয় সপ্তাহের নির্ধারিত পরিষেবার পরে প্রত্যাহার করে নেয়। ২০১৮ সালের জুনে ফ্লাইদুবাই কোনো কারণ না জানিয়েই দেশ ছেড়ে চলে যায়।

সেই বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসে পরাজিত হওয়ার পরপরই জাতীয় বাহক শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্স ২০১৫ সালে মাত্তালায় ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। কোম্পানিটি পরে বলেছে যে এই পরিষেবা বন্ধ করে তারা বছরে ১৮ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে। ২০১৬ সাল থেকে, সরকার বিমানবন্দরটি পরিচালনার জন্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের সন্ধান করছে কারণ এটি ভারী লোকসানে চলছিল। এখন দেখার, ভারত ও রাশিয়ার সংস্থার তত্ত্বাবধানে ‘সুদিন’ ফেরে কিনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির।

এর আগে ২০১৭ সালে, একটি বিশাল চীনা ঋণ শোধ করতে না পেরে, শ্রীলঙ্কা চায়না মার্চেন্টস পোর্ট হোল্ডিংসকে হাম্বানটোটাতে কাছাকাছি একটি বন্দর দখল করার অনুমতি দেয়। চীনা কোম্পানিকে ৯৯ বছরের লিজ দেয়া হয়েছে , বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেইজিং বিদেশে তার প্রভাব বিস্তারের জন্য ‘ঋণের ফাঁদ’ ব্যবহার করার বিষয়ে আশঙ্কা তৈরি করেছে।