সাবেক প্রক্টরের নামে বানোয়াট বক্তব্যের ভিত্তিতে বেরোবির কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

সাবেক প্রক্টরের নামে বানোয়াট বক্তব্যের ভিত্তিতে বেরোবির কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

ফাইল ছবি।

বেরোবি প্রতিনিধি: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর আবু কালাম মো: ফরিদ উল ইসলামের নামে ভিত্তিহীন বক্তব্য জুড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এই বক্তব্য সঠিক নয় এবং ঐ তারিখের আদেশ বলে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাও সঠিক নয় মর্মে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন সাবেক এই প্রক্টর। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মহলে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।

জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আলমিরা রাখাকে কেন্দ্র করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঐ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে নোটিশের জবাব দিলে তা সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে মুহাম্মদ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

নোটিশ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সাময়িক বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সিলগালাকৃত অফিস কক্ষের ফাইল প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে ১২ মার্চ ২০২০ ইং তারিখের আদেশ বলে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড.আবু কালাম মো: ফরিদ উল ইসলাম কর্তৃক বুঝিয়ে দেয়ার সময় তার (ফরিদ উল ইসলাম) বক্তব্য মতে সহকারী এই রেজিস্ট্রারের কিছু ফাইল পাওয়া যায়, যা তিনি প্রকৌশল দপ্তরে রেখেছিলেন। 

কারণ দর্শানোর নোটিশে যেভাবে তাকে ও তার বক্তব্য উল্লেখপূর্বক যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সঠিক নয় উল্লেখ করে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রারকে জানান সাবেক প্রক্টর আবু কালাম মো: ফরিদ উল ইসলাম। তিনি জানান, ‘উক্ত কারণ দর্শানো নোটিশের শুরুর বাক্যে ১২ মার্চ ২০২০ তারিখের আদেশবলে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমার নাম উল্লেখ করেছেন, তাও সঠিক নয়।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত সেই চিঠিতে তিনি বলেন, ‘আপনি কর্তৃক প্রদত্ত ১২ মার্চ ২০২০ তারিখের আদেশবলে (স্মারক নং: বেরোবি/রেজি: অ:আ:/১০/২০২০/৪৬৭, তারিখ: ১২-০৩-২০২০) বিগত ৯ সেপ্টেম্বর  ২০২০ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম’র সিলগালাকৃত অফিস কক্ষ প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি, কোন মাধ্যমেই কথা হয়নি, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়নি এবং এতদসংক্রান্ত কোন লিখিত বা মৌখিক বক্তব্যও আমি কোথাও কারো নিকট প্রদান করিনি। কিন্তু আপনি এই পত্রের বিষয়োল্লিখিত নোটিশে আমার বক্তব্য হিসেবে যে উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন তা আপনার কল্পনা প্রসূত বক্তব্য। রাষ্ট্রীয় কার্যে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা হিসেবে আপনার নিকট হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের নামে এমন মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপন একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমার সম্পর্কে আপনার এমন মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপনে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর হিসেবে আহত হয়েছি এবং অসম্মানবোধ করছি। এধরনের বক্তব্য আইনানুগভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তথা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আপনার কাছে আরও যুক্তিসংগত ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে।’ 

প্রকৃতপক্ষে, প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের অফিস কক্ষ সিলগালা করার সময় প্রকৌশল দপ্তরের টেবিলের উপর রক্ষিত অনেকগুলো ফাইল ছিলো যেগুলো ক্রমিক নম্বরসহ তালিকা প্রস্তত করার পর নিরাপদে রাখার জন্য একটি আলমিরার প্রয়োজন হয়। সে মোতাবেক আমি উপাচার্য মহোদয়ের পিএস দপ্তরে একটি আলমিরার চাহিদাপত্র পাঠাই। পরক্ষণে পিএস-টু-ভিসি জনাব আমিনুর রহমান কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে প্রশাসন ভবনের ৩য় তলা থেকে ফাইলসহ একটি আলমিরা নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমে নিয়ে আসেন। আলমিরায় কিছু ফাইল দেখে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, খালি আলমিরা চেয়েছি কিন্তু আলমিরাতে ফাইল কেন? উত্তরে পিএস (মাননীয় উপাচার্যের একান্ত সচিব) আমাকে বললেন, স্যার এই ফাইলগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রয়েছে। জানতে চাইলাম, কীভাবে বুঝলেন এখানে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রয়েছে? এর জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না। জানতে চাইলাম, এর মালিক কে? জনাব আমিনুর রহমান জানান, এই আলমিরা ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর সাহেবের।

পরে কয়েকটা ফাইল দেখে (পড়ে) মনে হলো, এটা জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের আলমিরা। তিনি (পিএস) ফাইলগুলো তার (জনাব আমিনুর রহমান) হস্তগত করতে চাইলে আমি তাকে বলি, অন্য দপ্তরের ফাইল ঐ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে দেখা বিধি সম্মত নয়। আমি উক্ত আলমিরার অগোছালো ফাইল এক জায়গায় জড়ো করে সুতলি দিয়ে বেঁধে একটি টেবিলের উপর রাখি। যদিও জনসংযোগ দপ্তরের বা অন্য কারো ব্যবহৃত আলমিরা এভাবে ব্যবহার করা সঠিক হয়নি। কিন্তু আর কোন আলমিরা না থাকায় এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষের তালিকাভূক্ত ফাইলসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় উক্ত আলমিরা ব্যবহার করতে বাধ্য হই। পুরো কক্ষের ফাইলগুলো তালিকাভূক্ত করে আলমিরাগুলোতে রাখতে অনেক রাত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনসংযোগ দপ্তরের সেই ফাইলগুলো টেবিলে রেখে কক্ষ তালাবদ্ধ করে বের হয়ে আসি। 

বিগত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম’র সিলগালাকৃত অফিস কক্ষ প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে বুঝিয়ে দিতে গেলে জনসংযোগ দপ্তরের আলমিরার সেই ফাইলগুলো নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ি। কারণ, একদিকে যেমন ফাইলগুলো প্রকৌশল দপ্তরের তালিকাভূক্ত ফাইল নয় অপরদিকে অন্য দপ্তরের ফাইল অরক্ষিত রাখা সমিচিন নয়। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মহোদয় কয়েকজন কর্মকর্তাসহ প্রকৌশল দপ্তরে উপস্থিত হলে আমি তাঁকে ফাইলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানাই। তিনি বলেন, ফাইলগুলো এখানেই থাকুক। যাঁর ফাইল তিনি লিখিতভাবে জানালে তাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ফাইলগুলো ট্রেজারার মহোদয়ের উপস্থিতিতে প্রকৌশল দপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।