ধর্ষণের বিরুদ্ধে পাবনায় প্রতিদিন মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পেশ

ধর্ষণের বিরুদ্ধে পাবনায় প্রতিদিন মানববন্ধন-বিক্ষোভ সমাবেশ, প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পেশ

ছবি: প্রতিনিধি

নোয়াখালী, সিলেট ও পাবনাসহ সারাদেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় পাবনার মানুষ ফুঁসে ওঠছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা, সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, এনজিও কর্মীরা মানববন্ধন,বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে। প্রায় প্রতিদিনই পাবনা প্রেসক্লাবের সামনেই একই দাবীতে মানববন্ধন,বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

নোয়াখালীতে গৃহবধূকে নির্যাতনসহ সারাদেশে সংঘটিত ধর্ষণ-নিপীড়ন এবং ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি ফাঁসির দাবীতে মঙ্গলবার(৬ অক্টোবর) পাবনা সচেতন নাগরিক সমাজ সকাল ১১টায় মানববন্ধন করে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে।  

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান লেখা ফেস্টুন 'ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড, 'নারীর নিরাপত্তা দাও রাষ্ট্র', স্টপ রেফ- প্রভৃতি লেখা প্লাকার্ড দেখা যায়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,“নোয়াখালীর অনাকাঙ্খিত ঘটনা সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকের হলেও সম্প্রতি নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অপরাধীরা এই গৃহবধুকে শুধু বিবস্ত্র বা সম্ভ্রমহানী করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং সে ঘটনার ভিডিও তারা নিজেরাই ধারণ করে সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। মূলত বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই দেশে অপরাধ প্রবণতা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। তাই এদের হাত থেকে দেশ, জাতি ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষা করতে হলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।” বক্তারা এই জঘণ্য কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত; তাদেরকে ফাঁসির দাবী জানান।

মানববন্ধন-পথসভায় বক্তৃতা করেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, মুশরিক পারভেজ,শ্রী জীবন কুমার সরকার, জান্নাতুল ফেরদৌস, জাকিয়া, রাহিমা খাতুন প্রমূখ। 

সোমবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক ও বাজারের প্রধান ফটকের সামনে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান লেখা ফেস্টুন ও মোমবাতি জ্বালিয়ে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন কলেজ ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনের সদস্য নন। তারা ঈশ্বরদীর বিভিন্ন কলেজ ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছে।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। বাস, ট্রেন, ল , অফিস, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা কোথাও আজ নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নেই। সারা দেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তার খন্ডিতাংশই সংবাদপত্রে ও মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাস্তব অবস্থা আরো ভয়াবহ। তারা ধর্ষককারীদেরকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।

এসময় বক্তব্য রাখেন-শাহরিয়ার নাফিজ স্মরণ, মুকিত বিশ্বাস,  মোহাম্মদ পাপ্পু, সন্জয়,নাবিল আহমেদ রুদ্র্র, দূর্জয়,জুবায়ের, তন্ময়, জীম, শাওনসহ আরো অনেকে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি ফাঁসির দাবিতে পাবনায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পাবনার তৃণমূল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন পাবনা স্টুডেন্ট’স এ্যাসোসিয়েশন।

রোববার (৪ অক্টোবর) পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটক থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে পাবনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব সংলগ্ন  ট্রাফিক মোড় চত্বরে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজ দেশের কোনো জায়গায় নারীরা নিরাপদ নয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, ভ্রমণের সময় যানবাহনেও নারী যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তাহলে নারীরা কিভাবে চলবে? রাষ্ট্র নারীকে কতটা নিরাপদে রাখতে পারছে? বক্তারা আরও বলেন, প্রত্যক্ষ প্রমাণ থাকার পরও ধর্ষকরা সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমরা জানতে চাই-তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আপনাদের সঠিক পদক্ষেপের অভাবে তারা ধর্ষণে উৎসাহিত হচ্ছে। এদের লাগাম টেনে ধরুণ। বক্তারা ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ডসহ ধর্ষণের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল স্থাপনের জোর দাবি জানান।এসময় বক্তব্য রাখেন, শ্রী জীবন কুমার সরকার, এমএইচ অনিক, স্মরণী আক্তার বর্ষা, আবির মোহাম্মদ জাহিদ প্রমূখ।

এর আগেরদিন একই দাবীতে ‘সামাজিক সচেতনতা ও অনুপ্রেরণামূলক মানবিক সংগঠন তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’  মানববন্ধন, পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে প্রেসক্লাবের সামনে। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,“নোয়াখালীর ঘটনা সারাদেশের মানুষের মনে দাগ কেটেছে। তাদেরকে এমন শাস্তি দেয়া হোক; আর যাতে কেও কখনো এ ধরণের কাজ করতে ভবিষ্যতে সাহস না পায়। বক্তারা ধর্ষকদের ফাঁসির দাবী জানান।

মানববন্ধন-পথসভায় বক্তৃতা করেন শাম্মী আক্তার, হোসনে আরা পারভিন,  জুবায়ের খান প্রিন্স, মোঃ মেহেদী হাসান ম্যাকসিম, কাউসার সরদার, জিসান হোসেন, সাঈদ হোসেন শুভ প্রমূখ।

পরে সংগঠনটি সারাদেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে পাবনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। দুপুরে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।