ক্যাম্পাসবিহীন শীতের আমেজ

ক্যাম্পাসবিহীন শীতের আমেজ

ফাইল ছবি।

করোনা বাংলাদেশে আসার ঠিক এক বছর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যেমন আনন্দঘন পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে উদযাপন করেছিল সুন্দর ভাবে। প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবারের কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সুন্দর সকালটা আর তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে থেকে দেখা হচ্ছে না। এক বছর আগের স্মৃতি নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের মতামত জানার চেষ্টা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু জাফর সালেহ


মু. সায়েম আহমাদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা কলেজ

কুয়াশার সাদা চাদর, নিস্তব্ধ রাতে শিশির পড়ার মৃদু শব্দ। কনকনে শীত আর হালকা হালকা শীতল হাওয়া। এসব কিছুই শীত আসার বার্তা নিয়ে আসে। শীতের সকালে কম্বল মুড়িয়ে আরেকটু ঘুম হয় না। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ক্লাসের দিকে যাওয়ার সময় সকালের মিষ্টি রোদের ঝিলিক গায়ে আর মাখানো হয় না। দেখা হয় না আর ক্যাম্পাসের মূল ফটকের পাশে অবস্থিত শিশির ভেজা ফুল বাগানটি। শীতের অলসতায় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না পুকুরপাড়ে আর মাঠে। খাওয়া হয়না আর টং দোকানের শীতের পিঠা ও চা। আজ এসবকিছু যেন স্মৃতি। যে স্মৃতিতে হৃদয়ে শূন্যতা বিরাজ করছে। নিরবে মুখরিত পুরো ক্যাম্পাস। তবুও ফিরে যেতে চায় এই মন। আর প্রাণ খুলে বলতে চায়, আসবে কবে ফিরে, পৃথিবী আগে রূপে। যেতে চাই আমি প্রিয় ক্যাম্পাসে।


পারভেজ আহমেদ ইমন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

শীতের সকালে ঘাসের বুকে জমে থাকা শিশিরের স্পর্শ পায়ে মেখে ক্যাম্পাসে হাজির হত হাজার হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের তারুণ্যের উত্তাপে শীতের জবুথবু সকাল উদ্দীপ্ত হয়ে উঠত। ফ্যাকাল্টির সাদা দেয়ালগুলোর মন যেন হয়ে উঠত রঙিন। অথচ এইবার যখন শীত আসলো,শিক্ষার্থী নেই ক্যাম্পাসে। ফাঁকা ক্যাম্পাসে কেউ নেই শিশির মাড়িয়ে দিতে। যে ঘাস শিশির মাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মন খারাপ করতো,সে আজ কুবির হাজারো শিক্ষার্থীদের অভাব মনে প্রানে অনুভব করছে। কেবল ঘাস নয়,শিক্ষার্থীদের অভাব অনুভব করছে শীতে কাবু হয়ে যাওয়া সাদা দেওয়াল,নীল বাস,ক্লাসের বেঞ্চ কিংবা চায়ের দোকানগুলো।হয়তো ফ্যাকাল্টির এক দেয়াল আরেক দেয়ালের কাছে দুঃখের কথা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। ওরাও হয়তো আজ বিষন্নতায় ভুগছে। নীল বাসগুলোর মনের অবস্থা কেমন? শিক্ষার্থীদের অত্যাচারে হয়তো অতিষ্ট এই বাসগুলো মনে মনে কেবল হাহাকার করছে। কবে আসবে শিক্ষার্থীরা। চায়ের দোকানগুলো? যেখানে বসে শিক্ষার্থীরা রাতে জুড়ে গান ধরতো,শীতের রাতের নিস্তব্ধতা দূর করতো; আজ হয়তো কেবলই নীরবতা। সেই নিরবতা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলছে। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে গেছে এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড..... হাজারো সেকেন্ড করে। তবুও ভাঙছেনা নিরবতা। মহামারীর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, প্রার্থনা করছে হাজারো মানুষ যাতে করে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয় কিংবা দূর হয় এই মহামারী। এই হাজারো মানুষের সাথে প্রার্থনায় বসেছে আজ এই চায়ের দোকান,নীল বাস কিংবা কাঁঠাল তলা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ একর জমি যেন তার সবটুকু ভালোবাসা নিয়ে তার শিক্ষার্থীদের ডাকছে।শিক্ষার্থীদের মনের অবস্থা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রাণাধিক শিশুটি হারিয়ে গেলে মায়ের যে অনুভূতি,ক্যাম্পাস থেকে দীর্ঘ বিচ্ছেদে শিক্ষার্থীদের মনের অবস্থাও তাই।খুব শীঘ্রই হয়তো ক্যাম্পাস খুলছেনা। ফলে বলা যায়, এই শীতে কুবি প্রাণহীন হিমশীতল হয়েই কাটাবে।শীতের ঘন কুয়াশায় হয়তো মিলিয়ে যাবে কুবির মলিন মুখ। মনে প্রাণে চাইবে এমন শীত যেন আর কুবির জীবনে না আসে। তবে আমরা চাই মহামারী কেটে যাক খুব দ্রুত।মিলন ঘটুক ক্যাম্পাস আর শিক্ষার্থীদের। আর এই মিলনে শব্দ বোমা আর আনন্দ বোমা ফেটে পড়ুক পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে।


তাসনিম হাসান মজুমদার, ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ

শহরতলিতে শীত নেমেছে বেশ কদিন হলো। শীতে ঝেঁকে বসেছে আমার ক্যাম্পাসের প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে ও। শীতে গাছের পাতা গুলো জড়ে গেছে। তারসাথে কেমন জানি শুকনো একটা ক্যাম্পাস। কোথাও কোনো কোলাহল নেই। বন্ধুদের শীতের সন্ধ্যার চায়ের পার্টি নেই। এই জুবুথুবু শীতে সারশূন্য একটা ক্যাম্পাস। প্রফেসর আর অফিস সহায়করাই এখন ক্যাম্পাস আবাদ করছেন। ক্যাম্পাসের মূলাপ্রাণ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীবিহীন নিষ্প্রভ শীতের ক্যাম্পাস। পরিচিত মুখগুলো নেই। জিরো পয়েন্টে আড্ডা নেই কিংবা প্যারেডে মাঠে ক্রিকেট খেলাটাও কম। শীতের সব আয়োজন আছে ক্যাম্পাসে তবে আয়োজন উপভোগ করার জন্য কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। থাকবেই বা কি করে? এই যে মহামারী করোনা তার কারণ। কবে করোনা কমবে কে জানে। ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়েছে। তবে আমরা শিক্ষার্থীরা ভ্যাক্সিন কবে নিতে পারো তার ও সঠিক তথ্য নেই কারো কাছে। এই কুয়াশায় মুড়ানো শীতের ক্যাম্পাস খুব মিস করি। ভোরে প্রাইভেট শেষে ক্যান্টিনে চায়ের আড্ডাটাও নেই। নতুন বছর করোনা বিদায় নিবে এই প্রত্যাশা। আগামী শীতে সবাই আবার একসাথে আড্ডা দিতে পারবো এই কামনা। 


আহমাদ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শীতের সকালে শিশির স্নাত ভোরে ঘুম থেকে উঠেই চাদর মুড়ি দিয়ে হিম বাতাসে ক্লাসে যাওয়া। গাছের ঝরা পাতায় ঢাকা রাস্তার মনোরম দৃশ্য,পল্লবের চাদরে আবৃত কোলাহল পূর্ণ শীতের ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া। আজ শীতের ক্যাম্পাস করোনার দীর্ঘ বন্ধে— শুধুই স্মৃতিচারণ। খুব মিস করছি— রঙিন আলোয় রঞ্জিত শীতের রাতের মায়াবী ক্যাম্পাস,কলা ভবনের সামনে বসা,কাঁঠাল তলায় খোশগল্প,বর্ণ চত্বরে বসে 'বর্ণের' সাহিত্য আড্ডা, কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে দিয়ে জমে উঠতো আমাদের 'মহাকালে'র রাতের টকশো। জাতিসত্ত্বা, ইতিহাস, সংস্কৃতি, সাম্প্রতিক ইস্যু, আন্তর্জাতিকসহ নানান বিষয় নিয়ে মেতে উঠতো 'মহাকালে'র রাতের পত্রিকা কেন্দ্রিক আড্ডা। কালে কালে হারিয়ে যাওয়া হতো মহাকালে। ভাসা হতো মহাকালের স্রোতে। এ বার শীতের কোলাহল মুক্ত নিস্তব্ধ-নিঃসঙ্গ ক্যাম্পাস। বিগত শীতের মতো আড্ডা জমে না,বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায়। খুবই মিস করছি— শীতের রাতের আকর্ষণীয়-মায়াবী-কোলাহলপূর্ণ ক্যাম্পাস ও আমাদের আলকেমিস্ট পরিবার।