নিয়ম না মেনে মোবাইল ফোন ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি!!

নিয়ম না মেনে মোবাইল ফোন ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুঁকি!!

মেহেরুন নেসা

বর্তমান যুগে আমাদের সঠিক উপায়ে জীবন যাপন না করার ফলে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন অনেক  রোগ। তেমনই একটি রোগের নাম হচ্ছে টেক্স নেক।

মেরুদন্ড বা পিঠ কুঁজো করে মাথা সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোবাইল ফোন, ট্যাব, আই-প্যাড,ল্যাপটপ ইত্যাদি চালানোর ফলে ঘাঁড় ও কাঁধের মাংশপেশীতে  অতিরিক্ত টান লেগে ইনজুরি হওয়াকে টেক্স নেক সিনড্রোম বলে।যুগের ব্যাপক চাহিদার জন্য এই সকল প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের মধ্যে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক কিছু গবেষনায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৮৭% কিশোর কিশোরী (১৪-১৮ বছর বয়সী) এবং যুক্তরাজ্যে প্রায ৭৯% (কিশোর-কিশোরী ১২-১৫ বছর বয়সী) তাদের নিজস্ব স্মার্টফোন ব্যবহার করে।

আরও একটি গবেষনায় দেখা গেছে দিনে ৫ঘন্টা বা তারও বেশী সময় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ চালানোর ফলে প্রতি ১০ জনের ৭ জনই টেক্স নেক এ ভুগছেন। সুতরাং এটি এখনই সকলের জন্য বিশেষ করে শিশু কিশোরদের জন্য সতর্কতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

   টেক্স নেক কিভাবে ক্ষতি করে:

আমরা যখন স্বাভাবিক পজিশন এ থাকি অর্থ্যাৎ ঘাঁড় সোজা থাকে (০) ঘাড়ের মাংশপেশীকে শুধুমাত্র মাথার ওজনই বহন করতে হয় (১০-১২পাউন্ড)। আমাদের মাথা যখন সামনের দিকে ঝুঁকে তখন  প্রতি ১ইঞ্চি সামনে ঝুঁকার জন্য ঘাঁড়ের মাংশপেশীকে প্রায় দ্বিগুন ওজনবহন করতে হয়। অর্থ্যাৎ ১৫ ডিগ্রি সামনে ঝুঁকার জন্য ২৭ পাউন্ড আরও বেশি ঝুকলে (৩০ ডিগ্রির জন্য ৪০ পাউন্ড) (৪৫ ডিগ্রির জন্য -৪৯ পাউন্ড) এবং খুব বেশী ঝুকলে  (৬০ ডিগ্রির জন্য ৬০ পাউন্ড) পর্যন্ত ওজন বহন করতে হবে। এই অতিরিক্ত ওজন বহনের জন্য ঘাঁড় ও কাঁধের মাংশপেশী ও নার্ভ ছিড়ে যাওয়া এমনকি ডিস্ক পর্যন্ত সরে যেতে পারে।

  •  কি কি ক্ষতি হয়ঃ

  1. তীক্ষ্ন ঘাঁড় ব্যথা ও কাধ ব্যথা।

  2.  ঘাঁড় ও কাঁধের মাংশপেশী শক্ত হয়ে যাওয়া

  3. প্রচন্ড মাথা ব্যথা, মাথা ঘুরানো, চোখে ঝাঁপসা দেখা।

  4. ঘাঁড় থেকে ব্যথা হাতের দিকে যাওয়া।

  5.  হাত ও আঙ্গুল অবশ ও ভারভার অনুভুত হওয়া।

  6. মেরুদন্ডের ক্ষয়জনিত রোগ।

  7. খুব অল্প বয়সে বাত ব্যথা সৃষ্টি।

  8. পিঠ ব্যথা, কোমর ব্যথা।

  9. মেরুদন্ডের ডিস্ক সরে যাওয়া।

  10. মাংশপেশী ও নার্ভ ছিড়ে যাওয়া।

  11. মেরুদন্ডের আকৃতির পরিবর্তন।

কী করনীয়:

    ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই এর প্রধান উপায়। কিছু সচেতনা এবং নিয়ম মেনে চললে  

    আমরা সহজেই টেক্স নেক থেকে নিজেদের সুস্থ রাখতে পারি।

  • মোবাইল ফোন অন্যান্য গেজেট যতুটুকু সম্ভব চোখের দৃষ্টিশক্তি বরাবর রাখা উচিত।
  • মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, প্রয়োজনে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর বিরতি নেয়া ও চোখের কিছু ব্যায়াম করা।
  • সোজা হয়ে সঠিক পজিশনে বসা, ঘাড় ও মাথা সামনের দিকে না ঝুকে কাজ করা।
  •  দীর্ঘক্ষন একই ধরনের পজিশনে না থাকা । প্রয়োজনে প্রতি ২০-৩০ মিনিট পরপর একটু হাটুন ও ঘাঁড়কে এদিক সেদিক নাড়াচাড়া করুন।

 

  কিছু ব্যায়ামঃ

 

ক) ঘাঁড়কে ডানে, বামে, সামনে, পেছনে টানটান করে ধরে রাখুন ও ছাড়–ন। এটি প্রতি ঘন্টায় ১০-১৫ বার করতে পারেন। এরফলে ঘাড়ের মাংশপেশীতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

খ) ঘাঁড় সোজা করে থুতনি টানটান করে সামনে আনুন ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। আবার পেছনে আনুন।এটিও ঘন্টায় ১০-১৫ বার করতে পারেন।

গ) সোজা হয়ে বসে কাধ দুটো সামনে পেছনে টানটান করে ধরে রাখুন। এটি প্রতি ঘন্টায় ১০-১৫ বার পর্যন্ত  করুন।

যারা দীর্ঘদিন যাবত ব্যথায় ভুগছেন তারা অব্যশই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে এই ধরনের সমস্যায় ঔষধের চেয়ে ফিজিওথেরাপী বেশী কার্যকারী। বিভিন্ন ধরনের ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন ম্যাসাজ, স্ট্রেচিং এক্সারাসাইজ জয়েন্ট মবিলাইজেশন, হিট থেরাপী, আল্ট্রসাউন্ড থেরাপী, ড্রাই নিডলিং ইত্যাদির মাধ্যমে ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে টেক্স নেক থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।

সচেতন হন সুস্থ থাকুন।

 

মেহেরুন নেসা

ফিজিওথেরাপী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

ডিরেক্টর, এম পি আর সি ঢাকা।