কুয়েতে এমপি পাপুলের বিচার শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার

কুয়েতে  এমপি পাপুলের বিচার শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার

সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুল

মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম ওরফে কাজী পাপুলের বিচার শুরু হচ্ছে ১৭ই সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের কোন বর্তমান সংসদ সদস্যকে এর আগে কখনো বিদেশের মাটিতে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের উল্লেখ করে কুয়েতের ব্যক্তিমালিকানাধীন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে এই খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এই মামলায় কুয়েতের আরও কয়েকজন অভিযুক্ত রয়েছেন, যাদের মধ্যে দেশটির দুইজন আইন প্রণেতাও আছেন। গত ৬ই জুন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেয় কুয়েতের সরকারি কৌঁসুলিরা। সেই সময় তার প্রতিষ্ঠানের একজন হিসাবরক্ষকসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেয়া, অর্থ পাচার, মানব পাচার এবং ভিসার অবৈধ লেনদেন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ১৫ই জুন আল-কাবাস সংবাদ প্রকাশ করে যে, মোহাম্মদ শহিদ বা কাজী পাপুল নামের এই সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে তিনি বলেছেন যে, তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বন্ধুত্বের নিদর্শনস্বরূপ ৫০ হাজার দিনার বা এক লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৮ ডলার তিনি উপহার দিয়েছিলেন। এর আগে এই পত্রিকাটি খবর প্রকাশ করে যে, কাজী শহিদের সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের পাচারের এসব ঘটনায় কুয়েতের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং কর্মকর্তারাও জড়িত আছেন।

বসবাসের অনুমতির অবৈধ লেনদেনের ব্যাপারে কুয়েতের সরকার অভিযান শুরু করার পর এই গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলো ।কুয়েতের আইন অনুযায়ী, নাগরিকরা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশিদের স্পন্সর করতে পারেন এই শর্তে যে, তারা তাদের জন্য কাজ করবেন।

তবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার ইচ্ছা না থাকলেও অনেকে বিদেশি শ্রমিকদের কাফালা বা বসবাসের অনুমতি দেয়ার নামে ব্যবসা করে থাকেন। এর ফলে বিদেশি শ্রমিকরা কুয়েতে কাজ খুঁজতে আসেন, কিন্তু মূল স্পন্সরের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা থেকেই যায়।

'কাফালা' নামের এই স্পন্সরশিপ প্রথার সংশোধন করার জন্য আহবান জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। অথবা আইন পরিবর্তনের আহবান জানিয়েছে যাতে বিদেশি শ্রমিকরা তাদের চাকরি পরিবর্তন করতে পারেন অথবা তার স্পন্সরের অনুমতি ছাড়াই দেশ ত্যাগ করতে পারেন।

 

রাজনীতির চমক শহিদ ইসলাম

রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাক লাগিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন আদায় করে। মহাজোটের প্রার্থীই সরে দাঁড়িয়েছিলেন মিস্টার ইসলামকে কেন্দ্রীয়ভাবে তার জোট সমর্থন দেয়ায়।

নির্বাচনের পর আরেক চমক ছিলো মিস্টার ইসলামের স্ত্রী যখন সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। এরপর দেশের রাজনীতির চমক এই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম আবারও আলোচনায় আসেন গত ফেব্রুয়ারিতে যখন কুয়েতের একটি সংবাদপত্রে বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে।

যাকে পরে ভুয়া সংবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। মিস্টার ইসলাম আবারো আলোচনায় যখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কুয়েতি সংবাদপত্রকে উদ্ধৃত করে প্রচার করা হয় যে মিস্টার ইসলামকে 'মানব পাচারে' জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করেছে কুয়েতের পুলিশ। সূত্র: বিবিসি